পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোহন õዓ “জমিদার-প্রাসাদে গিয়াছে। উত্তম! দেখুন, মিঃ স্যানিয়েল আমাদের এই জংসনের ওপর বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। এখান থেকে প্রাসাদের দূরত্ব কত?” - মিঃ স্যানিয়েল কহিলেন, হেটে গেলে পাঁচ-ছয় মিনিটে যাওয়া যায়। আর মোটরে...” “চলুন আমরা হেঁটেই যাই।” অফিসার অগ্রসর হইলেন। তিনি এক সময়ে কহিলেন, “যেরূপ পুলিসের বেড়াজাল ফেলা হয়েছে, আমার মন বলছে, মোহন এ-ক্ষেত্র তার কথা রাখতে পারবে না। সত্য বলতে কী, আমার আন্তরিক ইচ্ছা, সে যেন জেনেশুনে এমন ভীষণ অবরোধের মধ্যে মাথা গলাতে চেষ্টা না করে। তা’ একমাত্র উন্মাদের কাজই হবে। না, মিঃ স্যানিয়েল ?” পুলিসের সি. আই. ডি-র বড় কর্তার মুখে একটা দসু্যর সম্বন্ধে এ-ধরনের উক্তি শুনিয়া উভয় শ্রোতাই বিমূঢ় হইয়া উঠিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষীয় অফিসারের মস্তব্যের প্রতিবাদ করিবার অধিকার না থাকায়, মিঃ স্যানিয়েল কহিলেন, “দসু মোহন নিজের বিপদ সম্বন্ধে অত্যন্ত সজাগ, স্যার। আমি তো এখনও মিঃ সরকারের সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত হতে পারছি না।” অফিসার মুখে একপ্রকার অবজ্ঞার ধ্বনি করিয়া কহিলেন, “ক্ষেপেছেন। আমরা মশা মারতে কামান দাগছি। একটা যুবকের হাত থেকে একটা জমিদারকে রক্ষা করবার জন্য আমাদের এত আয়োজনের কোন প্রয়োজন ছিল না। জমিদারের সামর্থ্যই তাকে রক্ষা করবার পক্ষে প্রচুর ছিল। যাই হোক, সে কতকগুলো জাদুকরের অভিনয় কোরে সহসা অত্যন্ত বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। এর জন্য একমাত্র দায়ী একখানা চোতা সংবাদপত্র। কারুর বিরুদ্ধে যদি কোন পন্থা অবলম্বনের প্রয়োজন দেখা দিয়ে থাকে, তবে তা দিয়েছে বাঙলার ডাকের বিরুদ্ধে। ওই কাগজখানাই তুচ্ছ ব্যাপারকে ফেনিয়ে ফেনিয়ে এতখানি কোরে তুলেছে। আজ সকলের মুখে ঐ এককথা। মোহন, দসু মোহন। কমিশনার থেকে আরম্ভ কোরে সেপাই পর্যন্ত ঐ একই ম্যানিয়ায় ভুগছে। সর্বস্থানে সর্বকাজে মোহন। আমরা শাসন করি নি বলেই একটা দুর্বল, ক্ষীণ-প্রাণ শৌখিন বাঙালী-যুবক আজ এতটা ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছে।” তাহারা ইতোমধ্যে সিংহদ্বারের সম্মুখে উপস্থিত হইয়াছিলেন। অফিসার দেখিলেন, সুবৃহৎ ফটকের সম্মুখে ছয়জন বন্দুকধারী পুলিস-সেন্ট্র ও ছয়জন জমিদারের দারোয়ান যেন কেল্লার ফটকে যুদ্ধের সময় পাহারায় নিযুক্ত হইয়াছে। of অফিসারদের দেখিয়া সেন্ট্রিরা মিলিটারী অভিবাদন করিল। তেপ দ্বিতীয় দেউড়িতে ৮ জন সঙ্গিনধারী পাহারা এবং তৃতীয় ও অবশিষ্ট সবগুলিতে অগ্রসর হইতেছিলেন। শেষ ফটক পার হইয়া তাহারা দ্বিতলে শয়ন-কক্ষের দ্বারে আসিয়া দেখিলেন, দুইজন সেন্ট্রী দ্বার রক্ষা করিতেছে। অফিসারের মুখে মৃদু হাসি ফুটিয়া উঠিল। তিনি অস্ফুট কণ্ঠে কহিলেন, “আহা, বেচারী জমিদার।” পুলিস-সুপার মুখ ফিরাইয়া হাস্য গোপন করিলেন। মিঃ স্যানিয়েল দ্বারের পর্দা সরাইয়া উকি মরিয়া দেখিলেন, জমিদার নীলরতন ভয়ে মৃতপ্রায় হইয়া বসিয়া রহিয়াছে। তাহাকে দেখিয়া জমিদার নীলরতনবাবু যেন প্রাণ পাইলেন; তিনি উচ্চস্বরে কহিলেন, “আমি তো আর ভাবতে পারি না। আপনার দেরি দেখে যা ভয় হচ্ছিল আমার!”