পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ն, Ե- মোহন অমনিবাস মিঃ স্যানিয়েলের পিছনে পুলিস-সুপার ও র্তাহার পিছনে হাস্যমুখে চীফ অফিসার প্রবেশ করিয়া নীলরতনবাবুর সহিত করমর্দন করিলেন ও সকলে উপবেশন করিলেন। নীলরতনবাবু কহিলেন, “তবে আর আমার কোন ভয় নেই! বড়সাহেব যখন এসেছেন, তখন বোধহয় মোহনের সম্বন্ধে আমি নিশ্চিন্ত হ’তে পারি, কি বলেন ?” মিঃ স্যানিয়েল সবিস্ময়ে কহিলেন, “এত বন্দোবস্ত কোরেও কি আপনার ভয় দুর করিতে পারি নি আমরা, মিঃ সরকার?” নীলরতনবাবু হাসিবার ব্যর্থ চেষ্টা করিয়া কহিলেন, “এখন আর আমার মনে কোন ভয় নেই।” সহসা সিংহদ্বারে সানাইয়ের করুন রাগিণী ঝংকৃত হইয়া উঠিল। চীফ অফিসার কহিলেন, “কিসের বংশী-ধ্বনি?” মিঃ স্যানিয়েল মৃদু হাসিয়া কহিলেন, “আপনি ভুলে যাচ্ছেন, স্যার, আগামী কাল জমিদার মিঃ সরকারের শুভ-বিবাহ। তাই মাঙ্গলিক বাদ্যধ্বনি হচ্ছে।” চীফ অফিসার কহিলেন, “সর্বনাশ! বাদ্যকরেরা সবাই তো বিদেশী ব্যক্তি ?” মিঃ স্যানিয়েল কহিলেন, “অপরিচিত ব্যক্তি, তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু আগামী কাল আর ওদের দেখতে পাবেন না, স্যার। আমি স্বয়ংমিঃ সরকারের অনিচ্ছা সত্ত্বেও সানাইয়ের আয়োজন করেছি। কারণ বাঙালীর শুভ-বিবাহে শুধুসঙ্গিন আর বন্দুক মাঙ্গলিক অভিনয়ের পার্ট করবে, দেখতে বড় দৃষ্টিকটু হয়, স্যার। তাছাড়া বিবাহের প্রধান অঙ্গই হ'ল আনন্দ-ধ্বনি।” চীফ অফিসার তাৎপর্য বুঝিয়া মৃদু হাসিলেন; কহিলেন, “বৃথা চেষ্টা আপনার, মিঃ স্যানিয়েল। মোহন দস্যকে আপনি প্রতারিত করতে পারবেন বোলে মনে হয় না। সে যেভাবে আমাদের শক্তির, আয়োজনের, বন্দোবস্তের খবর রাখে, তার মধ্যে কোন ভাওতার স্থান নেই। সে যাই হোক, আমি দুএকটা বিষয় জানতে চাই।” “গতকাল রবিবার গেছে, না ?” চীফ অফিসার প্রশ্ন করিলেন। “আমি জানতে চাই, গতকাল কোন কোন ব্যক্তি আপনার প্রাসাদে প্রবেশ করেছিল?” চীফ অফিসার প্রশ্ন করিলেন। of নীলরতনবাবু কিছু বলিবার পূর্বে মিঃ স্যানিয়েল কহিলেন, “আমি হিসাব দিচ্ছি স্যার। গোয়ালা এসেছিল, দুধ দিতে, পরামানিক এসেছিল মিঃ সরকারের ক্ষৌরকার্য করতে, এস্টেটের ম্যানেজার এসেছিলেন কতকগুলি বিষয়ে আদেশ নিতে, আর.....” নীলরতনবাবু কহিলেন, “হা আর দু'জন এসেছিল প্রাসাদের সমস্ত ঘড়িতে সাপ্তাহিক পরিষ্কারের কাজ করতে ও দম দিতে।” চীফ অফিসার কহিলেন, “কত ঘড়ি প্রাসাদে আছে যে দুজন মিস্ত্রীর প্রয়োজন হয় ?” নীলরতনবাবু হাসিয়া কহিলেন, “প্রায় দুইশত দেওয়াল ঘড়ি আছে, স্যার।” চীফ অফিসারের চক্ষু বিস্ফারিত হইল। তিনি কক্ষমধ্যস্থ মূল্যবান সুবৃহৎ ঘড়িটার দিকে চাহিয়া মনে মনে দুইশত ঘড়ির একটা আনুমানিক মূল্য করিয়া, বাঙালী-জমিদারের ধনের অঙ্ক কল্পনা করিয়া বিস্মিত হইলেন। কহিলেন, “দুধওয়ালা অর্থাৎ গোয়ালা ক'জন এসেছিল?” “দুজন।” নীলরতনবাবু কহিলেন।