পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

|r মোহন অমনিবাস আমরা শুধু এই ভাবিতেছি যে, এত বড়ো একটা অন্যায় ও গর্বিও কর্ম ধনী যদি অর্থের অপার মহিমায় নির্বিবাদে অনুষ্ঠান করিতে পারেন, তবে সমাজ-লালস্থা, আইন আদালতের স্বার্থকতা কি ? হতভাগিনী মাধুরীকে রক্ষা করিবার কি কেহ বা কোন শক্তিই নাই ? কোন শক্তিই যদি না থাকে, তবে আমাদের সমাজ-ব্যবস্থা চূর্ণ করিয়া দিয়া অরণ্যে যাওয়াই শ্রেয়। কেহ হয়তো যুক্তি দেখাইবেন যে, কন্যার পিতা যখন স্বেচ্ছায় তাহার কন্যাকে বৃদ্ধের হাতে তুলিয়া দিতে পারিতেছেন, তখন অন্যের ইহাতে মাথাব্যথা হয় কেন ? আমরা তাহাদিগকে জজের মন্তব্য স্মরণ করাইয়া দিতে চাই। তিনি কেস ডিসমিস কারবার পূর্বে মন্তব্য করিয়াছেন যে, ‘এমন অনেক অপরাধ আছে, যেখানে আইন নিরুপায়। বর্তমান কেসে নাবালিকা কন্যা মাধুরীর পিতা যখন বলেন যে, তিনি স্বেচ্ছায় মত দিতেছেন, তখন বুঝিতে কষ্ট হয় না যে, এই তথাকথিত ‘স্বেচ্ছার পিছনে কাহার রক্ত চক্ষু উকি মারিতেছে। যাহা হউক আমি তাহার কথা বিশ্বাস না করিলেও, মোকদ্দমা ডিসমিস করিতে বাধ্য হইলাম।” আগামী ২০শে বৈশাখ বিবাহের দিন স্থির হইয়াছে। এই দুঃখকর সংবাদের পরিসমাপ্তি কি ভাবে হইবে তাহা ভাবিতেও আমরা শিহরিয়া উঠিতেছি। ভগবানের নিকট প্রার্থনা করা ভিন্ন আমাদের মত অসহায়দের যে আর কি উপায় আছে তাহা ভাবিয়া পাইতেছি না। যিনি দ্রৌপদীর লজ্জা নিবারণ করিয়াছেন, সেই পরম-কৃষ্ণ যেন এই হতভাগিনী বালিকার জীবন যৌবন রক্ষা করেন—আমরা আকুল মনে এই প্রার্থনা করিতেছি। প্রত্যেক শিক্ষিত ব্যক্তিও নিশ্চয় আমাদের সঙ্গে এই প্রার্থনায় যোগ দিবেন। দ্বিতীয়বার পাঠ করিবার পর মোহনের ভাব ভয়ঙ্কর হইয়া উঠিল। সে অস্ফুট কণ্ঠে কহিল, “আগামী ২০শে বৈশাখ ! মাত্র একটি মাস আর ৪ দিন মধ্যে আছে। মোহনের পক্ষে তাই যথেষ্ট।” মোহন তাহার বিশেষ ভাবে ছাপা চিঠির কাগজে লালকালিতে একখানি পত্র লিখিল। পরে সংবাদ-পত্ৰ দেখিয়া খামের উপর শিরোনামা ও ঠিকানা লিখিয়া পত্ৰখানি খামে ভরিয়া টিকিট আটিয়া দিল। ডাকিল, “বিলাস।” বিলাস চা ও খাবার রাখিয়া অদূরে দাঁড়াইয়াছিল, কহিল, “আজ্ঞা করুন, কর্তা।” “এদিকে আয়, শোন। আমার মোটর নিয়ে বড় ডাকঘরে এই চিঠিখানা ফেলে আয়।” মোহন আদেশ করিল। (* বিলাস পত্ৰখানা হাতে লইয়া কহিল, “চা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে, কর্তী” মোহন খাবারের পাত্র টানিয়া লইয়া কহিল, “আচ্ছা তুই যুগ" বিলাস পত্র লইয়া বাহির হইয়া গেল। আহার করিতে করিতে মোহন আপনাকে যেন আপনি কহিল, “অনেক দিন চুপচাপ বসেছিলাম, যা হোক একটা কাজের মত কাজ মিললো এতদিনে।” মোহন চায়ের কাপে চুমুক দিল। (ミ) পুরাকালে রাজা-মহারাজা, ধনী ব্যক্তিরা সাতমহল বা সাত দেউড়ী প্রাসাদে বাস করিতেন। অধুনাও এইরূপ প্রাসাদে বাঙলার বহু ধনী পরিবার বাস করেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাহার পিতৃ-পুরুষের নির্মিত সাতমহল প্রাসাদ-ভবনের সংস্কার করিতে করিতে উহাদের অস্তিত্ব মাত্র বজায় রাখিয়া চলিয়াছেন।