পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোহন সত্যিকার দসু্য আর ঘাতক কারা, দাদা! আপনি দুঃখিনী বোনের মুখ চেয়ে আমার দরিদ্র বাবাকে সর্বান্তঃকরণে ক্ষমা করুন।” মাধুরীর দৃষ্টি অশ্রুভারে আচ্ছন্ন হইয়া কণ্ঠ-স্বর রুদ্ধ করিল। মোহন ধীর স্বরে কহিল, “তোমার পিতাকে আমি ক্ষমা করেছি, বোন। মাধু!” “বলুন, দাদা?” মাধুরী মুখ তুলিয়া চাহিল। “আমি শুধু একটি কথা স্বকৰ্ণে শুনতে চাই। আমি জানতে চাই, আমি যে জন্য এতখানি অগ্রসর হলাম, সে কাজে আমি সম্পূর্ণ সফল হয়েছি কিনা। তুমি কি আমাকে বলবে, মাধুরী?” মোহন সংযত ও শান্ত স্বরে জিজ্ঞাসা করিল। মাধুরী বিস্মিত মুখে কহিল, “আমি তো কিছু বুঝতে পারলাম না, দাদা।” “আমিও তা’ বুঝেছি, বোন। বাঙালীর ছেলে আমরা। আমরা যতই কেন সাহসী হই না, তাহলেও আমাদের সংস্কারগত যে দুর্বলতা শিশু বয়স থেকে মনে সংক্রমিত হয়, তার হাত থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায় না। আমি জানিতে চাই মাধুরী, সুদৰ্শনকে পেয়ে তোমার অভীষ্ট সত্য কি পূর্ণ হয়েছে বোন?” দসু মোহনের মুখে একটি সলজ্জ করুণ আভা ফুটিয়া উঠিল। মাধুরী নত মুখে কহিল, “বাবা আমাকে ৭৫ বৎসরের বৃদ্ধ জমিদারের হাতে দিতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু আমি এই ভেবে শান্ত ছিলাম যে, বাবা আমার মঙ্গলের জন্য যা’ করছেন, তাতে অসুখী হওয়া, অশান্ত হওয়া, অপরাধ। কারণ দৈহিক সুখ ও তৃপ্তির ওপরেও মন বোলে যে বস্তুটি আছে, সে-রাজ্যে কর্তব্য, দায়িত্ব, স্নেহ ও ত্যাগ এই জিনিসগুলিরই প্রাধান্য, দাদা। কিন্তু........” মোহন সবিস্ময়ে কহিল, “কিন্তু কি বল, বোন ?” “কিন্তু মন যখন নিঃসঙ্গ, একলা থাকে, তখনকার জ্বালাতন থেকে আপনি আমাকে মুক্ত করেছেন, দাদা। আপনি সুখী হোন, শান্ত হোন, এই আমি দয়াময় মদনমোহনের চরণে প্রার্থনা জানাচ্ছি।” সহসা মাধুরী ক্ৰন্দনভারে ভাঙ্গিয়া পড়িল। মোহন পকেটে হাত ভরিয়া রুমাল খুজিতেছিল;তাহার একজন সহচর পিছন হইতে নমস্বরে কহিল, “কর্তা, ট্রেনের সময় হয়ে আসছে। পুলিস সাহেবও {{G তে পারেন।” মোহন বিরক্তিপূর্ণ দৃষ্টিতেতাহার দিকে চাহিতেই সে সভয়ে কয়েক পদ পিছইয়া গিয়া নত মস্তকে দাড়াইল। মোহন রুমালে চক্ষু মুছিয়া আশুতোষবাবুর দিকে চাহিয়া কহিল, "শুনুন? আশুতোষবাবু সহসা প্রশ্ন শুনিয়া চমকিত হইয়া কহিলেন, “আজ্ঞা করুন!” মোহন গম্ভীরকণ্ঠে কহিল, “দেরি কার জন্য করছেন এখনও ?” আশুতোষবাবু সভয়ে পুরোহিতের দিকে চাহিলেন। পুরোহিত মহাশয় এতক্ষণ নীরবে আশুতোষের ভাগ্য পরিবর্তনের অভিনব গতি-পথের দিকে চাহিয়া নিজ ভাগ্যের কথা চিন্তা করিতেছিলেন ও মোহন তাহাকে গণ্য না করিয়া অপরের সহিত কথা কহিতেছিল বলিয়া রাগে ফুলিতেছিলেন। সহসা ভাগ্য-পরিবর্তিত আশুবাবুর দিকে চাহিয়া কহিলেন, “গরীবের প্রাপ্য এখনও দেওয়া হয়নি, ভায়া। পাছে শেষে ভুলে যাও বা ভুলে যাওয়াই স্থির করো, তেমন সম্ভাবনার আশঙ্কা দূর হলেই তো শুভ কাজে লেগে পড়তে পারি, ভায়া।” আশুতোষবাবুর মেজাজ তপ্ত হইয়া উঠলেও, তিনি মোহনের স্থির-দৃষ্টি মুখের দিকে