পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१br মোহন অমনিবাস একবার চাহিয়াই সভয়ে কহিলেন, “তোমাদের ঐ এক রোগ, ঠাকুর। কবে যে তোমাদের ন্যায্য পাওনায় বঞ্চিত করেছি, তা’ তো ভেবে পাওয়াই মুশকিল। নাও, এধারে লগ্ন বয়ে যায়, মা’কে আমার পাত্রস্থ করো।” মেয়েদের দিকে চাহিয়া কহিলেন, “সবাই চুপ করে দাড়িয়ে দেখছ কী? এদিকে যে লগ্ন বয়ে যায়।” মেয়েরা শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনি করিবার উপক্রম করিতেই মোহন হাত তুলিয়া নীরব থাকিতে অনুরোধ করিয়া পুরোহিতের দিকে চাহিয়া কহিল, “আপনার উদ্দেশ্য আমি বুঝতে পেরেছি। আমিও আপনার মতই এই লোকটিকে বিশ্বাস করে নিশ্চিন্ত মনে যেতে পারি না। এই নিন আপনার দক্ষিণা।” গ্রহণ করিলেন। ইহার পর আরম্ভ হইল কন্যা সম্প্রদানের পালা। শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনিতে রাত্রির আকাশ-বাতাস মুখরিত হইয়া উঠিল। দসু মোহন তাহার সম্মুখে অসীম বিপদ জানিয়াও, এক ও একাগ্রচিত্তে বিবাহের মন্ত্রপাঠ শুনিতেছিল, সহসা কি মনে পড়ায় অস্থির হইয়া একজন সহচর বিদ্যুৎগতিতে বাহির হইয়া গেল। আশুতোষবাবুর দৃষ্টি সহসা মোহনের উপর পতিত হইলে মোহন কহিল, “শুনুন।” আশুতোষবাবু দ্রুতপদে মোহনের সম্মুখে অগ্রসর হইয়া আসিয়া কহিলেন, “আজ্ঞা করুন?” মোহন কহিল, “সুদর্শনের পিতা আসছেন, তার প্রাপ্য পণের টাকা আমি আপনার নাম করে প্রদান করেছি। কিন্তু তার আদর-আপ্যায়নের ক্রটী যেন না হয়। আর একটা কথা মনে রাখবেন, আমার সর্বস্থানেই চর আছে, আমি সব কথাই শুনতে পাই। অতএব ভবিষ্যতে আমি যদি শুনতে পাই, আপনি আমার আদেশের বিরুদ্ধে কিছুমাত্রও বিপরীত কাজ করছেন, তা’ হ’লে আপনার রক্ষা থাকবে না।” আশুতোষবাবু কৃতাৰ্থ হইয়া গেছেন, এইরূপ ভাব দেখাইয়া কহিলেন, “আমি কল্পনাতীতভাবে দয়া পেয়েছি, আমার দ্বারা আপনার একান্ত আনুগত্য ছাড়া আর কিছুই “উত্তম! আমি তবে চললুম।" বলিয়া মোহন বর ও কন্যার দিকে চা তাহাদের সহিত দৃষ্টি বিনিময় হইয়া গেল। মোহনের মুখে এমন এক অভিনব হাস্যধারা আসিয়া আশুবাবু পুনরায় চাহিতেই দেখিলেন, মোহন অস্তহিত হইয়াছে এবং সুদর্শনের পিতাঠাকুর প্রবেশ করিতেছেন। আহান করিয়া কহিলেন, “আসুন, আসুন, বড় দেরি করে ফেললেন যে ভাই?” সুদর্শনের পিতা একবার পুত্রবধুর অপরূপ লাবণ্যভরা ঢলঢলে মুখখানির দিকে চাহিয়া কহিলেন, “আর কি আমাদের সে শক্তি আছে, বেহাই ? বাতের জ্বালাতেই মরতে বসেছি।” এমন সময়ে শঙ্খ, উলু ও সানাইয়ের ধ্বনিতে সারা বাড়ী ডুবিয়া গেল। পুরোহিত শঙ্খ-ধ্বনি, উলুধ্বনি ও উল্লাস-ধ্বনির মধ্যে বিবাহের মন্ত্র পাঠ করিতে লাগিলেন।