পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোহন ఫి বীণানগরের জমিদার নীররতন সরকার এইরূপ এক প্রকাণ্ড প্রাসাদ-ভবনে বাস করেন। তিনি নামে জমিদার হইলেও, বহু রাজা-খেতাবধারী ব্যক্তির অপেক্ষা বহু গুণে বেশী ধনশালী। র্তাহার বিস্তৃত জমিদারীর আয় কয়েক লক্ষ টাকা। আমাদের আখ্যায়িকা এই ধনী জমিদার মহাশয়কে কেন্দ্র করিয়াই রচিত হইয়াছে। দ্বিতীয়বার বিপত্নীকে হইয়া তিনি ৭৫ বৎসর বয়সে পদার্পণ করিয়াও বালিকা-সহধর্মিণীর জন্য দৃঢ় পণ ধরিয়াছেন। আমরা প্রথম পরিচ্ছেদে তাহা অবগত হইয়াছি। সাতমহল সুরক্ষিত দেউড়ীর মধ্যে বাস করিয়া ধনী সরকার মহাশয় সাধারণ ব্যক্তির নিকট অ-সাধারণ পর্যায়ে উন্নীত হইয়াছেন। সদর দেউড়ীতে বরকন্দাজগণ দিবারাত্র সঙ্গিন পাহারায় জাগ্রত। র্তাহার দারোয়ানের সংখ্যা এত বেশি যেসমস্ত মহলের ও সদরের দারোয়ান একত্রে সমবেত হইলে একটি ছোটখাটো সৈনবাহিনীর তুল্য মনে হইত। সাধারণতঃ পল্লীগ্রামের জমিদারেরা যেরূপ হন, “বাঘে-গরুকে এক ঘাটে জল খাওয়াইতে সক্ষম, ইনিও তদুপ একজন দয়ামায়াহীন অত্যাচারী জমিদার। র্তাহার আসন্ন বিবাহের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় চারিদিক হইতে যখন প্রতিবাদ, স্তুতিবাদ, অনুরোধ, উপরোধ উত্থিত হইতে লাগিল, তখন তিনি এই ভাবিয়া বিস্মিত হইলেন যে, বিবাহ করিবেন তিনি, কন্যা দান করিবে কন্যার পিতা, তবে এই ঘরে ও বাহিরের লোকগুলির এইরূপ অর্থহীন অনাবশ্যক চীৎকার কেন ? উপরন্তু তিনি যে মহানুভবতা বশতঃ কয়েক সহস্র টাকার দলিলের ঋণ হইতে কন্যার পিতাকে মুক্ত করিয়া তাহাকে কন্যা দায় হইতে মুক্ত করিতেছেন, তাহার জন্য ধন্যবাদ-সভা না হইয়া, প্রতিবাদসভা হইতেছে কেন? নীলরতনবাবুর ৭৫ বৎসরের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও, তিনি এসবের হেতু বুঝিতে পারলেন না। ফলে যে সব গ্রাম্য ব্যক্তির তাহার নিকট আগমন ইতিপূর্বে সম্ভব ছিল, তাহার কঠিন আদেশে তাহদের আসিবার পথ বরকন্দাজ কর্তৃক রুদ্ধ হইয়া গেল। উপযুক্ত জ্যেষ্ঠপুত্র সমরেন্দ্র পিতার নিকট অনুযোগ জানাইয়া কহিল, “আপনার যদি সেবা-শুশ্রুযর জন্য আপনি এ বয়সে বিবাহ করতে চান, তবে আপনার পুত্রবধুর দ্বারাও সে কাজ সম্পাদন হতে পারে, কিন্তু একটা পনেরো বছরের কচি মেয়েকে আমাদের মারূপে এ-সংসারে এনে কেন আপনি লোক হাসাবেন বা সেই মেয়েটির জীবন চিরতরে পুত্রের নীতিদীর্ঘ বক্তৃতা শুনিয়া বৃদ্ধ কিছু সময় গম্ভীর মুখে থাকিয়া কহিলেন, “এবার তোমাকে মার্জনা করলুম। দ্বিতীয়বার আমার সামনে এসে এরকম ধৃষ্টতা প্রকাশ করবার যদি দুঃসাহস দেখাও, তবে তোমাকে আমি ত্যাজ্যপুত্র কোরে সমস্ত বিষয় ও অর্থ থেকে বঞ্চিত করবো। যাও!” সুবোধ পুত্র দুর্দান্ত পিতাকে বিশেষরূপেই জানিত; দ্বিতীয় বাক্য উচ্চারণ না করিয়া সে পিতৃ-আজ্ঞা পালন করিল। জ্যেষ্ঠা কন্যা রাত্রে ভয়ে ভয়ে কহিল, “বাবা, তুমি নাকি আবার বিয়ে করচ ?” “হা, নীরু। তোর একটা মা আনবার বন্দোবস্ত করছি।” নীলরতন নীরস হইলেও শান্ত স্বরে কহিলেন।