পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কারাগারে মোহন brQ আমার মুখর উপর ন্যস্ত কোরে নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। কি রূপ জীবনে অগ্নিরূপা নারী বহু দেখেছি, কিন্তু এমন রূপ কদাচিৎ চোখে পড়ে। আমি বিহুল দৃষ্টিতে চেয়ে রইলুম। - আমার অবস্থা বোধ হয় তরুণী বুঝতে পারলেন। মৃদু হেসে বললেন, “আমার একটা রুমাল এই চেয়ারে বোধ হয় ফেলে গেছি। একটু কষ্ট করে উঠতে হবে যে ?” ভাবলুম, একটু কষ্ট। ও মুখের আদেশ পেলে আমার জীবন পর্যন্ত দিতে কুষ্ঠিত হই না। আমি ব্যস্তভাবে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়ালুম। কিন্তু রুমাল কোথায় ? তরুণী মৃদু হেসে বললেন, “ধন্যবাদ। তা’ হ’লে অন্য কোথাও ফেলেছি বোধ হয়!” তরুণী নির্লিপ্ত, নির্বিকার ভাবে ..ংয়ের ধারে গিয়ে দাড়ালেন। আমি সবিস্ময়ে চেয়ে রইল, আমার মনে হ’ল, আকাশের সমস্ত বিদ্যুত একত্রীভূত হয়ে জাহাজের রেলিং-এর পাশে বাধা পড়েছে। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে আমি চেয়ে রইলাম। - অপরাহুে জাহাজ সমুদ্রে উপস্থিত হ’ল। চারিদিকে অনন্ত উদার জলরাশি। উত্তাপ তরঙ্গমালা-বিক্ষোভিত অকুল সমুদ্রের অসীম রূপ অনন্ত শক্তির রূপ চক্ষুর উপর যেরূপ ভাবে পরিস্ফুট হয়ে ওঠে, এমন ভাবে শক্তি সমাবেশের ধারণা আর কিছুতেই হয় না। জাহাজের নর-নারীর মুখে উচ্ছঙ্খল আনন্দদীপ্তি! মাত্র তিনটি দিন ও রাত্রির জন্য সকল প্রকার কর্ম ও দায়িত্ব হতে মুক্তি পেয়ে মানুষের নিয়ম-শৃঙ্খলে বাধা মন ক্ষিপ্ত ঘোড়ার মন উচ্ছসিত বেগে নৃত্য শুরু করেছে। এই কয়টি নর-নারীকে দেখে জগতে দুঃখ আছে, নিরানন্দ আছে, শোক, ব্যথা, হতাশা বোলে কোন বস্তু আছে, তা’ ধারণা করা শক্ত। মধ্যাহ-আহারের সময় জাহাজের ডাইনিং হলে দলে দলে নর-নারীর একত্রে আহারের দৃশ্য যে না দেখেছে, আহারকালীন অর্কেস্টার মধুর বাদ্যধ্বনি যে না শুনেছে, তাকে বোঝান যাবে না, খাওয়াতে এত আনন্দ আছে, জীবন-ধারণেও এত পূর্ণানুভূতি আছে। যে তরুণীকে প্রভাতে দেখে তার বিদ্যুৎ-রূপে মুগ্ধ হয়েছিলাম, আহারে টেবিলে ভাগ্যগুণে র্তার সঙ্গে একত্রে বসতে পেয়ে ধন্য হ’য়ে গিয়েছিলাম। আলাপ হ’ল তার সঙ্গে। তিনি রেঙ্গুনের এক অতি প্রভাবশালী বিখ্যাত বাঙালী ধনী ব্যবসায়ীর কন্যা। তিনি পিতার সঙ্গে দু’বার ইয়োরোপ ভ্রমণ কোরে এসেছেন। তরুণী কলকাতার এক বান্ধবীর বিবাহেনিমন্ত্রণ রক্ষা করতে এসেছিলেন। সঙ্গে গভর্নেসরূপে একজনু বৃদ্ধ মহিলা রক্ষীরূপে এসেছিলেন, এখন রেঙ্গুনে ফিরে চলেছেন। তরুণীর নাম মিস্রমী সোম। রমা গ্রাজুয়েট। রমা সুন্দরী, অপরূপা সুন্দরী, আসামান্য মেয়ে! \y আহারের সময়ে রমা হাসি মুখে বললেন, “ধন্যবাদ, মিঃ চন্দ। আমার রুমাল পেয়েছি।” একটা তুচ্ছ রুমালের জন্য লক্ষপতির একমাত্র সস্তানের এই উদ্বেগে আমার মুখে মৃদু হাসি ফুটে উঠল। রমা দুটি ভ্র কুঞ্চিত কোরে বললেন, “হাসছেন যে?” আমি হেসে বললাম, “আপনার সৌভাগ্য দেখে ” রমার মুখ আরক্ত হয়ে উঠল! তিনি মুখ নত কোরে বললেন, “হাজার তুচ্ছ হোক, এমন অনেক জিনিস আছে, যার মূল্য সোনা রূপার ওজনে হয় না, মিঃ চন্দ।” ہسي -