পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

5-Տ) মোহন অমনিবাস আমি আহত হলাম সম্পূর্ণ অহেতুক হেতুতে। তবু মৃদু হাস্য মুখে বললাম, “আমার এতটুকু দ্বিমত নেই, মিস সোম। কারণ, আপনার প্রীতি ও অপ্রীতির মূল্য সোনা-রূপায় ক্রয় করা যায় না, তাতে আমার বিন্দুমাত্ৰও সন্দেহ নেই।” রমার নত মুখ লাল হ’য়ে আরো নত হয়ে পড়ল। রমার সেই সলজ্জ আরক্ত মুখ খানিতে যে ভাব ফুটে উঠল, আহারে না বসলে এখন আমার ছোট্ট কোডাক ক্যামেরায় এই অপূর্ব ভাবটা চিরতরে স্থায়ী কোরে রাখতুম। আহারে পর বিশ্রাম। কোন কাজ নেই, কর্তব্য নেই, দায়িত্ব নেই, অফুরন্ত অবসর ও নিদ্রা। সন্ধ্যা ঘণ্টাধ্বনি হ’ল। জাহাজ তখন সমুদ্রের বক্ষ মথিত কোরে পূর্ণবেগে ছুটেছে। আকাশে নির্মল চন্দ্র কিরণ দিচ্ছে। নিম্নে সুনীল জলধির বুকে মায়াপুরী সৃষ্টি করেছে। দলে দলে নরনারী প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর ডেকে ছুটে এসেছে। নানাবিধ উদ্ভট গল্পে আকাশবাতাস মুখরিত হয়ে উঠেছে। আমি, মিস রমা ও তিন-চারিটি তরুণ একত্র হয়ে নানা গল্পে মত্ত হয়েছি। আমার জীবনে এমন একটি দিনের কথাও স্মরণ করতে পারি না, যে দিন এমন সহজ স্বচ্ছন্দ ভরা মধুময় স্মৃতিতে পূর্ণ। মিস সোমের সঙ্গে পরিচয় হয়ে আমার জীবন যেন সহসা নুতন আলোক দেখতে পেয়েছে। চিরজীবন নারীকে ঘৃণা কোরে এসেছি। এতদিন ভেবেছি, নারী নরকস্য দ্বার’ বোলে একটা যে প্রবাদ বাক্য আছে, তা’ বর্ণে বর্ণে সত্য। কিন্তু জীবনব্যাপী ঘৃণা যে এমন সুধায় পরিণত হবে, কে তা জানত? সহসা চারিদিকের অস্ফুট গুঞ্জন-ধ্বনি স্তব্ধ হয়ে গেল। মুখে মুখে একটা ভীষণ বার্তা প্রচারিত হয়ে গেল, যে জাহাজের ক্যাপ্টেন অয়ারলেস পেয়েছেন, বিখ্যাত দস্য মোহন ছদ্মনামে আমাদের জাহাজে রেঙ্গুন চলেছে। তার রঙ অতি ফরসা। মাথার চুলের ভিতর নূতন কাটা দাগ আছে। যা শুকোয় নি এখনও। সে ছদ্মনামে চলছে। তার প্রথম অক্ষর ‘P’ বধি আয়ারলেস যন্ত্রে উঠে সহসা বিকল হয়ে পড়ায় বাকী নামটুকু জানতে পারা যায়নি। দসু মোহন যে ভয়াবহ প্রকৃতির দসু্যু কত ধনীর সর্বনাশ করেছে, কত পুলিস অফিসারের চোখের জলে নাকের জলে একশেষ করেছে, যে দসু্যর শত নাম শত ছদ্মবেশের আবরণে আসল রূপ আজ পর্যন্তও কেউ প্রত্যক্ষ করেনি, যে দসু্য পত্র দিয়ে পূর্বাষ্ট্রে সংবাদ পাঠিয়ে দসুতা করে, কেউ তার গতি রোধ করতে পারে না, যার ভয়াবহ প্রতিহিংসার কবলে কত নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, যে নিয়তির মত দুৰ্বার বজ্রের মত কঠোর, মৃত্যু অপেক্ষা ভয়াবহ, সেই দস্য মোহন আমাদের জাহাজের প্রথম শ্রেণীর যাত্রী হয়ে চলেছে! সকলের মুখ আসন্ন বিপদের ছায়াপাত হ’ল! সকলের মুখ রক্তশূন্য হয়ে গেল। (S) মিস রমা সোমের মুখ ভয়ে এতটুকু হয়ে গেল। সহসা সকল আনন্দ-প্রবাহ নিঃশেষ রুদ্ধ হয়ে গেল। - এক সময়ে রমা বললেন, “কি হবে, মিঃ চন্দ ?” আমি রমাকে সাহস দেবার জন্য বললাম, “ভয় কি? ক্যাপ্টেন যখন পূর্বাহুে খবর পেয়েছেন, তখন গ্রেপ্তার করতে তিনি বিলম্ব করবেন না।” -