পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

| কারাগারে মোহন 숙 ইয়োরোপে ঘুরে এসেছেন, সুতরাং বে-অব-বেঙ্গলের মত ছোট্ট সমুদ্রের সাইক্লোনে ওঁরা সব অস্থির হতে পারেন, কিন্তু আপনি ?” মিস সোমের মুখে মৃদু হাসি ফুটে উঠল, ক্ষণকাল নীরব থেকে বললেন, “সাইক্লোনের ভয়ে নয়, মিঃ চন্দ।” “তবে কিসের ভয়ে, মিস সোম? দসু মোহনের?” আমি সবিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করলুম। মিস সোম মুখ নত কোরে বললেন, “না।” আমার বিস্ময়ের আর অবধি রহিল না বললুম, “তবে?” বহুক্ষণ নীরবে আপনার মনের সঙ্গে যুদ্ধ কোরে অবশেষে মিস সোম বললেন, “এ যাত্রা যদি রক্ষা পাই, তবে আপনার সঙ্গে আবার দেখা হবার সম্ভাবনা আছে ত, মিঃ চন্দ?” আনন্দে আমি আত্মহারা এবং বাক্যহারা হয়ে উঠলুম। বহুক্ষণ অপলক চোখে চেয়ে থেকে অতিকষ্টে বললুম, “আপনার মনে থাকবার মত পরম সৌভাগ্য যদি এমন কোরেই সম্ভব হয়, তবে জগতে এমন কে দুঃখী আছে, যে সে-সম্পদ পরম পাওয়া বোলে মেনে না নেবে, মিস সোম?” শিক্ষিতা-নারী রমার দুটি পেলব-কোমল কপল আরক্ত হয়ে উঠল। র্তার দুটি রক্তরাঙ্গা অধরে ভীরু আবেগ কম্পিত হয়ে উঠল। এমন সময়ে ভীষণ শব্দে জাহাজের বিপদ-জ্ঞাপক ঘণ্টাধ্বনি শুরু হ’ল। আমার দুর্ভাগ্য অদৃষ্টে মিস সোমের হৃদয়ের কথা অশ্রুত রয়ে গেল। আমি তাকে ব্যগ্র কষ্ঠে কেবিনে যাবার জন্য অনুরোধ জানালাম। ডেকে যে দু-একজন নরনারী দূরে দূরে বসে কথা বলছিলেন, সকলে ত্ৰস্ত চরণে, ভীত অস্ফুট চিৎকারে যে যার কেবিনে চলে গেলেন। মিস সোম কম্পিত পদে দাড়িয়ে বললেন, “আমি চলতে পারছি না, আমাকে দয়া কোরে কেবিনে দিয়ে আসুন।” মিস সোম একটি হাত বাড়িয়ে দিলেন। আমি পরম-সৌভাগ্যে ভাগ্যবান হয়ে মিস সোমাকে ধীরে ধীরে তার কেবিনে দিয়ে এলুম এবং বার বার কোরে অনুরোধ জানিয়ে এলুম, তিনি ও তার গভর্নেস যেন এখনি হ্যামকে আশ্রয় গ্রহণ করেন। বাইরে এসে একবার স্তব্ধ প্রকৃতির দিকে চাইলুম। কে জানে, এই নিস্তব্ধ প্রকৃতির বক্ষ চিরে কোন সেই মহাদানব হুঙ্কার ছেড়ে ছুটে আসছে? কে বলতে পারে, আর অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের সমুদ্রের তলদেশে চিরবিশ্রাম গ্রহণ করতে হবে না? হয়তো জীবনের আর শেষ কয়টি মুহূর্ত বাকী আছে। তারপর সীমাহীন অখণ্ড অবসর বিশ্রাম, নিদ্রা। কে জানে, মৃত্যুর পর মানুষের গতি কি হয়? & জাহাজের অবিরাম ঘণ্টার শব্দ আসন্ন মৃত্যু-দূতের আগমন সংবাদ ঘোষণা করছিল, আমি কয়েক মুহুর্ত নীরবে দাড়িয়ে থেকে কেবিন অভিমুখে চলতে শুরু করলাম। (ع) কেবিনে প্রবেশ কোরে হ্যামকে আশ্রয় নিলুম। মন হতে কিছু সময়ের জন্য দসু মোহন অস্তৰ্হিত হয়ে গেল। পরিবর্তে মিস সোম, রমার ভয়ার্ত, আকুল উদ্বেগ ভরা মুখখানি আমার মন ও সত্তকে পূর্ণ কোরে ফেললে। আমার মন এইভেবে সাস্তুনা পেলো, যদিও সাইক্লোন তার সকল ভয়াবহতা নিয়ে মোহন (১ম)-৭ -