পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

:) Ե- মোহন অমনিবাস s আমাদের ওপর ভেঙে পড়ে, তা হলেও যে নারী প্রশান্ত মহাসাগর দু’বার অতিক্রম ; করেছে, একবার সাইক্লোনের মুখে পড়ে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে, সে নারী সাধারণ ; বালিকার মত একেবারে অসহ্য যাতনায় ভেঙ্গে পড়বে না। : কিন্তু সে কথা যাক। এখন আমি কেন এই পথে চলতে শুরু করেছি, কেন আমি অসম্ভবকে সম্ভব করবার দুরাশায় মত্ত হয়েছি, তার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণই খুঁজে পেলাম না। আমার ভাগ্যে ওরূপ নারী রত্ন লাভ কি কখনও সম্ভব হবে? রমার পিতা কি স্বেচ্ছায় র্তার রূপে-গুণে দুর্লভ কন্যা-রত্নকে আমার হাতে সমর্পণ করবেন? যদি না করেন, তবে আমি এরূপে নিজেকে হারিয়ে ফেলছি কোন হেতুতে। চিরদিনের জন্য অনুশোচনা ও দুঃখ স্বেচ্ছায় বরণ করে নেওয়ার মধ্যে সার্থকতা কোথায় ? কে যেন আমার কানে কানে বললে, জগতের সব বস্তুই দুই আর দুইয়ে চারের নীতিতে । বিচার করা চললেও, প্রেমের বিচার করা চলে না! প্রেম পাত্র-অপাত্র বিচার করে না, যুক্তিতর্কের ধার ধারে না, সম্ভব-অসম্ভব চিন্তা করে না—সে আপন গতিতে আপনি আত্মহারা হয়ে চলে। আমি ভাবলুম, আমার ফেরবার পথ আর নেই। যে-বস্তু মানুষ বিচার কোরে গ্রহণ করে না, যে-বস্তু আপনা হতে আপন স্বেচ্ছা-দুর্দম গতিতে অন্যের মন জয় করে, তাকে । ইচ্ছা থাকলেও আর তাড়ানো যায় না। উপায় থাকলেও নিরুপায় হতে হয়। " নেই থাক্‌ উপায়। আমি চাই রমাকে। রমাহীন জীবনযাপন করা আমার পক্ষে অসম্ভব। যেমন কোরেই হোক, রমাকে জীবন-সঙ্গিনী করতে হবে। নইলে এ জীবনের কোন প্রয়োজন নেই, কোন অর্থ নেই। সহসা আমার চিন্তা ব্যাহত হ’ল। মনে হলো, সহস্ৰ দানব একসঙ্গে তাণ্ডব চিৎকার করতে করতে ছুটে আসছে। জাহাজের ঘণ্টাধ্বনি তীব্রতর হয়েছে। সেই দানবীয় চিৎকার শুনে বুঝলুম, সাইক্লোন-দৈত্য এসে পড়েছে। আর কয়েক মুহুর্ত, তারপর সেই ভীষণ দানবীয় শক্তির সঙ্গে আমাদের ক্ষুদ্র জাহাজের জীবন-মরণ যুদ্ধ শুরু হবে। কর্ণবধিরকারী চিৎকার সহসা নিকট হতে নিকটতর হতে লাগল। চক্ষুর পলক পড়তে না পড়তে সহস্ৰ দানবের বীভৎস হুঙ্কার আকাশ-সমুদ্র কম্পিত কোরে জাহাজের ওপর ভেঙ্গে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে আমার হ্যামক ভীষণ বেগে কাত হয়ে পড়ল। মনে হ’ল, জাহাজ ডুবে গেছে। সমুদ্রের তলদেশে ছুটেছে। (് মাত্র এক সেকেণ্ড । তারপর জাহাজ অন্য পাশে কাত হয়ে পড়ল, সঙ্গে সঙ্গে আমার 瑄、 হ্যামক অন্য পাশে ঝুলে পড়ল। তারপর কর্ণবধিরকারী অট্ট চিৎকার-তাণ্ডবের মধ্যে আমি একবার এদিকে, একবার ওদিকে ভীষণ বেগে দুলতে লাগলুম। জাহাজের সমস্ত বঁাশীর মিলিত তীব্র চিৎকার, ঘণ্টাধ্বনি, সাইক্লোনের অপার্থিব আওয়াজ একত্রে মিলে যে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করলো, মনে হ’ল এই মৃত্যু-উল্লাসের মাঝে মানুষের সাধ্য কী নিজেকে রক্ষা করে? মৃত্যু নিশ্চিত, মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী, মৃত্যু আগত ভেবেও আমার মন এতটুকু ভীত হ’ল না, শুধু শ্রীমতী রমার উদ্বেগ, কষ্ট ও যাতনার কথা ভেবে অস্থির হয়ে উঠল। যদি সাধ্য থাকতো, সম্ভব হত, তা’ হ’লে আমি ছুটে গিয়ে তাকে অভয় দিতাম, রক্ষা করতাম। কিন্তু মানুষের শক্তি সীমাহীন নয়। জাহাজের এই তাণ্ডব দোলানীর মাঝে স্থির হয়ে দাঁড়াবার কোন ক্ষমতা কোন মানুষেরই নেই।