পাতা:যশোহর-খুল্‌নার ইতিহাস দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যশোর-রাজ্য Woo লুণ্ঠনের ভয়ে নগরবাসীরা অনেকে ঐ সময়ে স্ব স্ব বসন ভূষণ পর্য্যন্ত বিক্রমাদিত্য ও বসন্ত রায়ের হস্তে প্রদান করেন। তাহারা ক্রমে নৌকাযোগে ঐ সকল দ্রব্যাদি যশোরে প্রেরণ করিতেছিলেন। পরবর্তী যুদ্ধে ও মহামারীতে সমস্ত নগরবাসী ছিন্ন ভিন্ন ও উৎসন্ন হওয়ায় এবং যুদ্ধক্ষেত্রে অনেকে প্রাণত্যাগ করায়, প্রত্যপণ-প্রার্থীর অভাবে ঐ সকল সম্পত্তির অধিকাংশ যশোরে থাকিয়া যায়। ইহা ভিন্ন যুদ্ধভয়ে এবং মহামারীর উৎপাতে গোঁড়তাগুর কত অধিবাসী যে যশোর রাজ্যের নানাস্থানে বসতি স্থাপন করিয়াছিলেন, তাতার ইয়ত্ত নাই। গৌড় নগরী বহুশত বৎসর হইতে প্রধান রাজধানী ছিল। হিন্দু ও পাঠান নৃপতিগণের অতুল ঐশ্বৰ্য্য তাহার শোভা ও গৌরব বৰ্দ্ধন করিতে কখনও কাতরত করে নাই। কথিত আছে, বঙ্গেশ্বর হুসেন শাহের আমলে গৌড়ের অনেক মধ্যবিত্ত লোকও স্বর্ণপাত্রে পানভোজন করিত। এখনও “হুসেন শাহের আমল” বলিলে, এক গৌরবময় সুবর্ণযুগের কথা স্মরণ-পথে আনিয়া দেয়। সেই হুসেনী গৌড়,—সেই হিন্দুর গৌরব-প্রদীপ্ত, বৌদ্ধের কীৰ্ত্তিমণ্ডিত, পাঠানের বিলাসবিলসিত, ধনসমৃদ্ধ ও হর্ঘ্যমালাসমন্বিত পুরাতন মহানগরী বহুযুগ ধরিয়া যে সম্পদ সংগ্ৰহ করিয়াছিল, তাহার কতকাংশ এক দৈব দুর্যোগে সুদূর সুন্দরবনে আসিয়া, বসন্ত রায়ের নব প্রতিষ্ঠিত যশোর-রাজ্যের মহিমা বৰ্দ্ধন করিল। যশোর নূতন রাজ্য নহে, বসন্ত রায় উহ নূতন করিয়া গড়িয়া ছিলেন মাত্র। যশোরের প্রাচীনত্বের কথা বিশেষভাবে এই পুস্তকের প্রথম খণ্ডে উল্লিখিত হইয়াছে। পূৰ্ব্বে যে চাদ খা চকের কথা বলিয়াছি, তাহ এই যশোর রাজ্যেরই একাংশ। মুন্দরবনের উত্থানপতনে কত যুগ যুগান্তরের কীৰ্ত্তিচিহ্ন লোকচক্ষুর বহিভূত হইয়া গিয়াছিল। কিন্তু সব চিহ্ন যায় নাই। বসন্ত রায় আসিয়া বন কাটাইয়া নূতন আবাদ, নূতন গ্রাম পত্তন করিয়াছিলেন বটে, কিন্তু সে বন চিরকালই বন ছিল না, এক সময়ে সেখানে জনস্থানও ছিল। আমরা প্রথম খণ্ডে মুন্দরবনের ইতিহাস প্রসঙ্গে দেখাইয়াছি, সমতটের এই সব অংশ প্রাকৃতিক কারণে কতবার উঠিয়াছে, কতবার পড়িয়াছে। সুন্দরবনের উন্নমনে কত স্থান উঠিয়া মনুষ্যাৰাসে পরিণত হইয়াছে, আবার আকস্মিক অবনমনে সে সব স্থান বসির গিয়া ভূগর্ভে বিলুপ্ত হইয়াছে। আমরা পরে দেখিব, কিরূপে প্রতাপাদিত্য কর্তৃক যশোরেশ্বরী দেবীর পীঠ মূৰ্ত্তি আবিষ্কৃত হইয়াছিল ; কিন্তু সে মূৰ্বর