পাতা:যশোহর-খুল্‌নার ইতিহাস দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপক্ৰমণিকা & তাহাতে জাতি-বিদ্বেষ নাই, ভোগাসক্তি শক্তিহীন হইতেছে, ভক্তির পথে মুক্তির পথ সোজা হইয়া গিয়াছে। মানুষে মামুষে বিদ্বেষের মুলে ধৰ্ম্মগত পার্থক্যই প্রধান। একটি ধৰ্ম্ম পাইবামাত্র মানুষ অন্ধের মত ভাবে, তাহার নিজের ধৰ্ম্মই সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ, অন্ত ধৰ্ম্ম নিকৃষ্ট ; সে এককই শুধু বুদ্ধিমান ও ভাগ্যবান, অন্তলোকে ভুল বুঝিয়া নরকস্থ হইবে। ধৰ্ম্ম উপলক্ষ্য মাত্র, অহঙ্কারই এই বিদ্বেষের মূল। এই অহঙ্কারের জন্ত মানুষ অঙ্গকে ঘৃণা করে—শক্রতার স্বষ্টি করে। দীনতাই এই অহঙ্কার নাশের উপায়—তাই দীনতাই চৈতন্য-ধর্মের মূল ভিত্তি। দীনতা আসিলে তুমি পরকে ঘৃণাবিদ্বেষ করিবে না; উল হইতে সহিষ্ণুতা আসিবে, তখন তুমি পরের ঘৃণাবিদ্বেষ সন্থ করিবে ; ইহা হইতে আসিবে—প্রেম ; যখন বিদ্বেষ নাই, পরের বিদ্বেষে বিৰক্তি নাই, তখন পবের প্রতি ভালবাসা বা অমুরক্তি আসিবে। দীনতা, সহিষ্ণুতা ও প্রেম—এই ত্রিতন্ত্রীতে বৈষ্ণব মন্ত্র বাজিবে, উহাতে বিশ্ব বিজিত হইবে। যতক্ষণ তুমি দীন, ততক্ষণ তুমি নিক্রিয় ; যতক্ষণ তুমি সহিষ্ণু, ততক্ষণও তুমি একপ্রকার নিক্রিয় ; কিন্তু যখন তুমি প্রেমিক, তখন তোমার কার্য্যক্ষেত্র স্বদুর বিস্তৃত। সে কার্য্যের বিরাম নাই, পাৰ্ব্বত্য স্রোতস্বিনীর মত প্রেমের ধারা দেশ প্লাবিত করিয়া ছুটিতে থাকে। চৈতন্তের ধৰ্ম্মস্রোতেও এইরূপ শুধু বঙ্গ কেন, ভারতবর্ধের প্রতি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ভাসাইয়া লইয়া গিয়াছিল। বিদ্রোন্তে দেশকে ছিন্নভিন্ন ও শান্তিশুষ্ঠ করে ; বিপ্লবে দেশকে ভাঙ্গিয়া চুরিয়া নূতন করিয়া গড়ে। হিন্দু পাঠানে অনেককাল ধরিয়া বিদ্রোহ চলিতেছিল, সে কলহে শাস্তি দেশান্তরিত হইয়াছিল। কিন্তু চৈতন্য-যুগের ধৰ্ম্ম-বিপ্লবে যখন জাতিভেদ ও বিদ্বেষের মূলে কুঠারাঘাত করিল, তখন দেশের অবস্থা ফিরিয়া দাড়াইল। প্রকৃত ভক্তের ধৰ্ম্ম ও ভক্তির পদার্থ দেখিলে সকলকেই শ্রদ্ধাবান হইতে হয়, তখন বিদ্বেষ-বুদ্ধি বিলুপ্ত হয়। এইভাবে মুসলমানও হিন্দুর গুণগ্রাহী হইল, দেশের অবস্থা ফিরিয়া গেল। এমন সময়ে গৌড়ের তত্ত্বে বসিলেন আলাউদ্দীন হসেন শাহ। বাল্যজীবনে তিনি হিন্দুর গৃহে প্রতিপালিত হইয়াছিলেন বলিয়াই হউক বা ধৰ্ম্ম-বিপ্লবের আবর্তনে পড়িয়াই হউক, তিনি হিন্দুমুসলমানে শাস্তি, প্রীতি ও সাম্যভাব প্রতিষ্ঠিত কৰিয়াছিলেন বলিয়া তাঙ্গর শাসনকাল বঙ্গের একটি স্মরণীয় যুগ। বঙ্গ তখন