পাতা:যশোহর-খুল্‌নার ইতিহাস প্রথম খণ্ড.djvu/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবম পরিচ্ছেদ—সুন্দরবনের বৃক্ষলতা। bሥፃ জীবজন্তু বাস করিতে পারে না। সুন্দরবনের স্বাভাবিক অবস্থান ও প্রকৃতির জন্য প্রত্যেক বিষয়ে ইহার বিশেষত্ব আছে। আমরা প্রথমে বৃক্ষলতা সম্বন্ধে বিবেচনা করিব। সুন্দরবনে বহু বৃক্ষলতা পাওয়া যায়। তবে পাৰ্ব্বত্য-প্রদেশে উদ্ভিদের যেরূপ সংখ্যাধিক্য, এখানে তত নহে ; কারণ সকল গাছ সুন্দরবনে জন্মিতে পারে না। এখানে বাতাস, জল, মৃত্তিকা সকলই লবণাক্ত । এই লবণ দাহারা সহ্য করিতে পারে, জলীয়বাষ্প সম্বলিত সামুদ্রিক বাতাসে যাহাঁদের তৃপ্তি হয়, প্রবল বায়ুবেগে যাহারা আত্মরক্ষা করিতে সক্ষম, এবং মূলদেশ জলপ্লাবিত হইলে যাহারা মরে না, সেই সকল বৃক্ষলতাই সুন্দরবনে জন্মে। এখানে বৃক্ষমাত্রেরই মূলদেশ অবিরত জোয়ারের জলে ধৌত হওয়ায় উন্মুক্ত হইয় পড়ে ; প্রবল বায়ুবেগে বৃক্ষকুল অবিরত আন্দোলিত হয় এবং নদীতীরে জলস্রোতে পাহাড় ভাঙ্গিয়া পড়িয়া বৃক্ষমূল উৎপাটিত করিয়া । দেয়, এজন্ত সুন্দরবনের প্রত্যেক গাছেরই শিকড় অত্যন্ত অধিক। ঐ সকল শিকড় চারিদিকে ছড়াইয় পড়ে, এক বৃক্ষের শিকড় অন্য বৃক্ষের শিকড়গুলিকে জড়াইয়া ধরে ; যে সকল বৃক্ষের উপরে পরস্পরকে আলিঙ্গন করিবার সুযোগ না হয়, তাহারা মৃত্তিকার নিয়ে পরস্পরকে গাঢ় আলিঙ্গন করে এবং সকলে জুটিয়া সম্মিলিত বলে আত্মরক্ষা করিয়া থাকে। সুন্দরবনে মাটির নিম্নে কিছুদূর পর্যন্ত শুধুই শিকড়ময়। যেখানে মূলদেশ ধুইয়া যায়, তথায় দেখা যায়, শিকড়গুলি নানাদিক্ হইতে টানা দিয়া কেমন সুন্দরভাবে বৃক্ষগুলিকে সোজা করিয়া রাখে। গর্জন প্রভৃতি বৃক্ষের অধিকাংশ শিকড় মাটির উপরই থাকে। বটগাছের বোয়ার মত এই সকল শিকড় বৃক্ষকাণ্ড হইতে চতুদিকে টানা দিয়া বৃক্ষগুলিকে রক্ষা করে। মুন্দরবনের বৃক্ষসমূহের যেমন শিকড়ের পরিমাণ অধিক, তেমন সেই সকল শিকড়ের বায়ু সেবনের প্রয়োজনও অধিক। মূলদেশ জলে প্লাবিত থাকিলে, শিকড় গুলির বায়ু সেবনের সুবিধা হয় নী ; এজন্য শিকড় হইতে উৰ্দ্ধদিকে অসংখ্য শূলের মত ক্ষুদ্র স্বচল শিকড় উত্থিত হয়, উহাদিগকে শূল বা শূলো (blind root-suckers ) বলে। মুন্দরবনের প্রায় সকল বৃক্ষেরই শূলে হয়, কাহারও সরু, কাহারও মোটা, কাহারও দীর্ঘ, কাহারও ছোট ; তবে স্বন্দরী গাছের শূলগুলি সংখ্যায়ও অধিক এবং আকারেও