পাতা:যশোহর-খুল্‌নার ইতিহাস প্রথম খণ্ড.djvu/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬৬ যশোহর-খুলনার ইতিহাস । “পরে গুরু অন্ত এক মূৰ্ত্তি দিল ফিরি বাহির করিল মূৰ্ত্তি জটাজাল চিরি৷ অষ্টাদশভূজা আদ্যশক্তির প্রতিমা । র্তাহার রূপের কথা দিতে নারি সীমা ॥” এবং সে মূৰ্ত্তি পঞ্চমুণ্ডী আসনে প্রতিষ্ঠিত করিয়া নিত্য পূজার ব্যবস্থা করিতে বলিয়া দেন। সন্ন্যাসীর নাম ব্ৰহ্মাণ্ড গিরি। রাজচন্দ্র তখন রামকান্ত বিদ্যাবাগীশ ও কমলাকান্ত সাৰ্ব্বভৌম নামক র্তাহার কুল-পুরোহিত ভ্রাতৃদ্বয়কে ডাকিয়া, পাণিঘাটে বটমূলে মূৰ্ত্তি প্রতিষ্ঠা করিয়া মন্দির নিৰ্ম্মাণ করিয়া দেন । উপরি লিখিত বিবরণ হইতে দেখা গেল, যে পাণিঘাটে মূৰ্ত্তি প্রতিষ্ঠা ১৭৩৭ খৃষ্টাব্দের পর হইয়াছে। পুরোহিতদিগের বিবরণ হইতে দেখা যায়, রাজীবের পর তাহার ৮১০ পুরুষ বাস করিতেছেন। এই পুরোহিত-বংশ যেরূপ দীর্ঘায়ু, তাহাতে অনুমান করা যায় যে ১০ পুরুষে ৪০০ বৎসর অতিবাহিত হইয়াছে। অর্থাৎ রাজীব পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে বা ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমে দেবীমূৰ্ত্তি প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু পাণিঘাটের নাম ইহা অপেক্ষাও প্রাচীন বলিয়া বোধ হয়। যখন রাঙ্গদিয়া, মধুদিয়া প্রভৃতি দ্বীপের স্বষ্টি হইতে ছিল, সে সকল স্থানে কোন বসতি হয় নাই, উহার দক্ষিণ দিয়া পশর পর্যন্ত বিস্তৃত স্থান জলমগ্ন ছিল, তখনও পাণিঘাটের নাম গুনা যায়। পাণিঘাট হইতে পশর নদীর পার্শ্ববৰ্ত্তী কুড়লতলা পর্যন্ত একটি খেয়া পড়িত, ইহার এক খেয়া দিতে এক দিন লাগিত। তখন এই দিকে ভৈরবের দক্ষিণে ও পশরের পূৰ্ব্বে কোন বসতিস্থান ছিল না। খুলনা জেলায় এ কথা অনেকস্থানে সাধারণ প্রবাদবাক্য পরিণত হইয়া রহিয়াছে। দেশের প্রকৃতি দেখিলেও তাহা অনুমান করা যায়। ইহাতে ভূতের গল্প কিছু নাই। লোক-পরম্পরাগত এই সকল প্রবাদ উড়াইয়া দেওয়া চলে না। সুতরাং অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে পাণিঘাটের নামোৎপত্তি হইয়াছে, একথা স্বীকার করা যায় না অথচ পুথিগত তথ্যের ও একটা ভিত্তি থাকা সম্ভব । সকল অবস্থা পৰ্য্যালোচনা করিয়া আমাদের মনে হয়, পাণিঘাট অতি পুরাতন স্থান। সেন রাজগণের রাজত্ব কালেও এখানে দেবীপীঠ ছিল।