পাতা:যশোহর-খুল্‌নার ইতিহাস প্রথম খণ্ড.djvu/৫০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8X8 যশোহর-খুলনার ইতিহাস । জোকার (জয়কার ) দিতনে এবং কখনও সমস্বরে গান করিতেন বটে কিন্তু গানে বিশেষ দক্ষত ছিল বলিয়া মনে হয় না। পুরুষেরা দেহতত্ত্ব ও “ভবানী বিষয়” প্রভৃতি সম্বন্ধে গান করিতেন ; যাহারা দক্ষ তাহারা তানপুরারও সাহায্য লইতেন । রামকথা, কৃষ্ণকীৰ্ত্তন ও কালীকীৰ্ত্তন লইয়া পাচালি গান হইত, ইহাতে চামর ও মন্দিরার ব্যবহার ছিল। শেষভাগে হিন্দুর মধ্যে মনসার ভাসান ও মুসলমানের মধ্যে গাজীর গান প্রচলিত হইয়াছিল। চৈতন্তযুগে মৃদঙ্গ ও করতাল সহযোগে হরিনাম সংকীর্তনে দেশ মাতাইয়া তুলিত । রাজা মুকুট রায়ের সময়ে তিনি পশ্চিমবঙ্গ হইতে কিন্নরজাতি আনিয়া তাহার রাজধানীর সন্নিকটে বসতি করান ; ইহারা নৃত্য-গীতে অতীব সুদক্ষ ছিল। মুকুট রায়ের পতনের পর ইহার উলসী প্রভৃতি স্থানে গিয়া বাস করিয়াছিলেন। নদীমাতৃক দেশে অনেক লোক নৌকায় বাস করে ; তাহারা আত্মতৃপ্তির জন্ত যে গান গাহিত, সেই “সারী” গান আবার পরের চিত্ত-বিনোদন করিত। যশোহরখুলুনার “সারী” গানের মত আর মিষ্ট জিনিস কিছু আছে কি না সন্দেহ। এ যুগে লোকে মৃত্তিকার দ্রবোর উপর মুনীর রঙ ফলাইয়া “মীনা” (ename ) বা এনামেল করিতে পারিত। ছাড়ি কলসীর উপর এইরূপ মীনার কাজ হইত, তাহার প্রত্যক্ষ প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। পাজাহানের সমাধি মন্দিরের মেজের উপর মীনা করা ইট দিরা ঢাকা ছিল । উহাতে ঘরের ভিতর অতি সুন্দর দেখাইত । সাংসারিক জীবন—মুসলমানের আক্রমণ বা অত্যাচার দ্বারা দেশের শান্তি যতই নষ্ট হউক, অধিবাসীরা মোটের উপর মুর্থী ছিল ; কারণ খাদ্য দ্রব্য তখন সুলভ ছিল। পাঠান ও মোগলে বিশেষ পার্থক্য এই ছিল, যে পাঠানেরা এদেশে বাস করিতেন, দেশের অর্থ দেশে রাখিতেন, তাহার মোগলদিগের মত বাঙ্গালার অর্থ লইয়া দিল্লী আগ্রার সৌষ্ঠব বাড়াইতেন না। দেশের অর্থ দেশে থাকায় খাদ্য দ্রব্য স্থলভ ছিল, পরিচ্ছদে বিলাসিত ছিল না, প্রাচীন হিন্দুভাব পরিবর্তিত হয় নাই ; দুই চারি জন লোকে নূতন মুসলমানী ধরণ গ্রহণ করিলেও সাধারণতঃ দেশের অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয় নাই। খাদ্য দ্রব্যের মধ্যে “দুধ মাছ” সস্ত ছিল, উহাই প্রধান খাদ্যোপকরণ। ধান চাউল অত্যন্ত সুলভ ; “সকল ধান ২২ পাহারী” বলিয়া একটি কথা আছে,