পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

আরম্ভসূচক কাশিধ্বনি করলেন। সমস্ত সভা শান্ত হল। আমি ভাবতে লাগলুম, কী গান গাব। আমি নিজে যে গানগুলি ভালোবাসি সেগুলিকে এমন উলুবনে ছড়াতে কেমন প্রাণে লাগে; সে গানগুলি শুনে যে সকলে হাসবে তা আমি সহ্য করতে পারতুম না। একটা গান তো আরম্ভ করলেম। এমন শোচনীয় অবস্থায় আমি আমার জীবনে আর কখনো পড়ি নি; কোনো প্রকার করে গোটা কতক হুর ও কথার সমষ্টি গলার ভিতর থেকে বের করেছিলেম আর-কি। সভাস্থ Miss ও Mrs. -দের এত হাসি পেয়েছিল যে, সে স্রোতের উচ্ছ্বাসে ভদ্রতার বাঁধ টলমল করছিল— কোনোমতে তাঁরা হাসি গোপন করতে পারছিলেন না, কেউ কেউ হাসিকে কাশির রূপান্তরে পরিণত করলেন, কেউ কেউ হাত থেকে কী যেন পড়ে গেছে ভাণ করে ঘাড় নিচু করে হাসি লুকোতে চেষ্টা করছেন, একজন কোনো উপায় না দেখে তাঁর পার্শ্বস্থ সহচরীর পিঠের পেছনে মুখ লুকোলেন; যাঁরা কতকটা শান্ত থাকতে পেরেছিলেন তাঁদের মধ্যে চোখে চোখে টেলিগ্রাফ চলছিল। সেই সংগীতশাস্ত্রবিশারদ প্রৌঢ়াটির মুখে এমন একটু মৃদু ঘৃণা ও তাচ্ছিল্যের হাসি লেগেছিল যে, সে দেখে শরীরের রক্ত জল হয়ে আসে। এই রকম অবস্থায় আমার মতো ভালোমানুষ যে কী দুরবস্থায় পড়েছিল তা তোমরা বেশ কল্পনা করতে পারছ। গান যখন সাঙ্গ হল তখন আমার মুখ কান লাল হয়ে উঠেছে, কেবল কালো রঙ বলে কেউ দেখতে পায় নি। চার দিক থেকে একটা প্রশংসার কোলাহল উঠল, কিন্তু অত হাসির পর আমি আর সে দিকে বড়ো কর্ণপাত করলেম না। ছোটো Miss H আমাকে গানটা ইংরিজিতে অনুবাদ করে বলতে অনুরোধ করলেন, আমি অনুবাদ করলেম— গানটা হচ্ছে ‘প্রেমের কথা আর বোলো না’।

৯৬