পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সপ্তম পত্র

তাতে গুলি নেই, ফাঁকা আওয়াজ; ধোঁওয়ার প্রাচুর্য ও শব্দের প্রাখর্য থেকে পাঠকেরা কল্পনা করবেন যে, যার প্রতি লক্ষ করা হয়েছে সে ব্যক্তি বাসায় গিয়ে মরে থাকবে—কিন্তু সে ব্যক্তির কানে তালা ধরা ও নাকে ধোঁওয়া যাওয়া ছাড়া আর কোনো রকম সাংঘাতিক অপকার হয় নি।[১] লেখক-মশায় বলেছেন যে, ‘শুধু কেবল স্বাধীনতা হইলেই যদি স্ত্রীলোকদের আর কোনো গুণের প্রয়োজন না হইত, তাহা হইলেই আমরা লেখকের মতে সম্পূর্ণ মত দিতে পারিতাম। কিন্তু তাহা তো নহে— যেমন স্বাধীনতা চাই তেমনি তাহার সঙ্গে শোভন লজ্জাশীলতা, বিনয়, সরলতা, উচ্চের প্রতি ভক্তিমত্তা, নীচের প্রতি দয়াদাক্ষিণ্য ইত্যাদি অনেক গুণ থাকা চাই।’ ইত্যাদি। কিন্তু এতটা হাঙ্গামা কেন? বাংলা বা সংস্কৃত, আর্য বা অনার্য, সাধু বা অসাধু কোনো ভাষার অভিধানে যদি স্বাধীনতা অর্থে বেহায়ামো,; অবিনয়, অসরলতা, উচ্চের প্রতি অ-ভক্তিমত্তা, নীচের প্রতি অ-দয়াদাক্ষিণ্য লেখা থাকত তা হলে এতটা বাক্যব্যয় শোভা পেত; নইলে সরলহৃদয় পাঠকদের চোকে ধুলো দেওয়া ছাড়া লাথি মেরে মেরে এতটা বাক্যের ধুলো ওড়ানোর আর তো কোনো ফল দেখি নে।[২] এই-সকল বকাবকির পর লেখকমহাশয় যেখানে ‘প্রকৃত কথা’ বলেছেন সেইখানেই আমি সব চেয়ে কম আয়ত্ত করতে পেরেছি। তিনি বলেন, ‘প্রকৃত কথা এই যে, আমাদের দেশে এক্ষণে রাজনৈতিক স্বাধীনতা, শিক্ষাবিষয়ক স্বাধীনতা, রুচিবিষয়ক স্বাধীনতা ইত্যাদি অনেক স্বাধীনতার অভাব আছে, তাহার সঙ্গে কী মাত্রায় স্ত্রী-স্বাধীনতা ভালোয় ভালোয় টেঁকিয়া থাকিতে পারে তাহাই এখন বিবেচনাস্থলে।’ প্রথমতঃ, ‘শিক্ষাবিষয়ক স্বাধীনতা’ ‘রুচিবিষয়ক স্বাধীনতা’ ও ‘ইত্যাদি অনেক স্বাধীনতা’র অর্থ আমি তো ভালো করে বুঝতেই

১১১
  1.  
  2.