পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবম পত্র

খুব আবশ্যক করে বটে,[১] কোনো মানুষের সহজ অবস্থায় আত্মপ্রত্যয় থেকে ও কথা মনে আসবার কোনো সম্ভব নেই। গুরুলোকদের কাছে বেশি কথা কওয়া বা হাসা পর্যন্ত নিষেধ। কী ভয়ানক! যাদের সঙ্গে চব্বিশ ঘণ্টা[২] অনবরত থাকতে হবে তাদের সঙ্গে যদি মন খুলে কথাবার্তা না কবে, প্রাণ খুলে না হাসবে, তাদের কাছেও যদি জিবের মুখে লাগাম লাগিয়ে, হাস্যোচ্ছ্বাসের মুখে পাথর চাপিয়ে আর মুখের ওপর একটা সম্ভ্রমের মুখস প’রে দিন রাত্রি থাকতে হয় তা হলে কোথায় গিয়ে আর রিশ্রাম পাবে?[৩] ইনি দাদা, উনি কাকা, তিনি মামা, এ ছোটো ভাই, ও ভাইপো, সে ভাগ্নে, কারু কাছে ভালো করে মুখ খোলবার জো নেই।[৪] কী করা যায়? বাড়ি থেকে বেরিয়ে বোসেদের চণ্ডীমণ্ডপে গিয়ে আড্ডা গাড়তে হয়, সেখানে পাঁচ জনে মিলে তামাক খাওয়া, দাবা খেলা ও হাসি তামাসা করা যায়। এ দুর্দশা কেন বলো দেখি! আফিস থেকে এসে যেমন আফিসের কাপড়চোপড় ছেড়ে হাঁফ ছাড়া যায় তেমনি বাড়িতে প্রবেশ করেই লৌকিক ব্যবহারের খোলষ পরিত্যাগ করে মনটাকে কেন একটুখানি হাত পা ছড়াতে দেওয়া হয় না? তখনো কেন আমি স্ত্রীর সঙ্গে চুপিচুপি ফিস্ ফিস্ করে কথা কব, পাছে পাশের ঘর থেকে শ্বশুর ভাসুর বা ঐ রকম একটা কোনো মান্যবর পূজনীয় সম্পর্কের ব্যক্তি আমার স্ত্রীর গলা শুনতে পায়? স্ত্রীর গলা বা হাসি শুনলে কার কী সর্বনাশ হয় বলো দেখি। একেই কি সহজশোভন ভাব বলে? এর মধ্যে সহজ ভাবট। কোন্‌খানে বলো দেখি। বিলিতি-বাঙালিরা যে দেশে ফিরে গিয়ে খুঁৎ খুঁৎ করেন ও বলেন আমাদের দেশে ‘home' নেই, বিলেতেই যথার্থ ‘home' আছে, তাঁরা বোধ হয় তার এই অর্থ করেন যে -বিলাতের পরিবারে একটা স্বাধীন-উচ্ছ্বাসের ভাব

১৫৫
  1.  
  2.  
  3.  
  4.