পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র



১৫৮

    এ জায়গাটা ভারী গোলমেলে—ছোটো ছেলেরা ঘাড় গুঁজে বসে থাকবে এটি আমাদের দেশের কোন্ পিতা বা কোন্ হিতাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তি চক্ষে দেখিতে পারে? আর, ছেলেরা বয়ঃপ্রাপ্ত হইলে তাহারা বিনয় নম্রতা ও ভদ্রতা শিক্ষা না করিয়া ভদ্রসমাজে পুৎলোবাজির ন্যায় ছুটাছুটি করিয়া বেড়াইবে ইহাই বা কোন্ পিতা সভ্যতার চরম সীমা জ্ঞান করিতে পারে? আমাদের দেশের কোন্ পিতার মন এরূপ কঠিন তাহা জানি না যে প্রাপ্তবয়স্ক পুত্র তাঁহার কোনো কথার উত্তর না দিয়া ঘাড় গুঁজিয়া বসিয়া থাকিলে তিনি মনে মনে বড়োই আহ্লাদিত হন—আহ্লাদের কারণ শুধু এই যে, পুত্রের উপর দেখো কেমন আমার প্রভুত্ব! এ-সকল অত্যুক্তির প্রতিবাদ করিতে হইতেছে, ইহাতে হাসিও পায় কান্নাও পায়। ভা.স.

    লালয়েৎ পঞ্চবর্ষাণি দশবর্ষাণি তাড়য়েৎ।
    প্রাপ্তে তু ষোড়শে বর্ষে পুত্রং মিত্রবদাচরেৎ॥

    ভালোবাসা ব্যতীত ভক্তি হতেই পারে না। ভক্তি হতে যদি ভালোবাসা উঠাইয়া লওয়া যায় তবে শুদ্ধ কেবল শাসনভয় মাত্র অবশিষ্ট থাকে। ভালোবাসা পাত্রভেদে ভিন্ন ভিন্ন মূর্তি ধারণ করে। দম্পতি-ভালোবাসা পুত্রকন্যার প্রতি কিছু অর্শিতে পারে না; পুত্রবাৎসল্য কিছু বন্ধুবর্গের প্রতি অর্শিতে পারে না; ভ্রাতৃসৌহার্দ্য কখনো গুরুজনের প্রতি অর্শিতে পারে না। দম্পতির ভালোবাসাকে দম্পতিপ্রেম কহে, পুত্রকন্যার প্রতি যে ভালোবাসা তাহাকে স্নেহ কহে, বন্ধুবর্গের ভালোবাসাকে বন্ধুতা সখ্য প্রণয়, ইত্যাদি কহা যায়, উচ্চের প্রতি যে ভালোবাসা তাহাকে ভক্তি কহে; অতএব ভক্তি ভালোবাসা হইতে স্বতন্ত্র একটি বস্তু নহে— তবে কি-না ভক্তির ভালোবাসা প্রণয়ের ভালোবাসা নহে, স্নেহের ভালোবাসা নহে, দম্পতিপ্রেমের ভালোবাসা নহে, উহা অপেক্ষা আর একটু উচ্চ দরের ভালোবাসা। যাঁহারা কেবল যাত্রার গীতেরই মর্মজ্ঞ, উচ্চ অঙ্গের গীত তাঁহাদের কাছে গীতই নহে; তেমনি শুদ্ধ যাহারা কেবল সখ্যরসেরই মর্মজ্ঞ, ভক্তি তাঁহাদের চক্ষে ভালোবাসাই নহে— সথ্যকে ধরিয়া বাঁধিয়া ভক্তির সিংহাসনে বসাইলে তবেই তাঁহাদের মনঃপূত হয়। কিন্তু তাঁদের জানা উচিত যে, যাত্রার সুরে