পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দশম পত্র

স্ত্রীস্বাধীনতা সম্বন্ধে সম্পাদক-মহাশয়ের সঙ্গে আমার ঝগড়াটা নিতান্তই চলল দেখছি। কিন্তু সে তো এক প্রকার সুখেরই বিষয়। বিষয়টা গুরুতর; সে সম্বন্ধে দু পক্ষের মতামত ব্যক্ত হয়ে একটা আন্দোলন হওয়াই প্রার্থনীয়। কিন্তু কথাটা যতই গুরুতর ও সারবান হোক-না, আমার গলার দোষে মারা যায় বা! অর্থাৎ সম্পাদক-মহাশয় পাছে তাঁর অত্যুচ্চ অট্টহাস্যের প্লাবনে আমার ক্ষীণকণ্ঠের কথাগুলো একেবারে ভেঙে-চুরে উলটে-পালটে তোলপাড় করে ভাসিয়ে নিয়ে যান, কথাগুলো একেবারে পাঠকদের কানে ভালো করে না পৌঁছয়। এখেনে একটা সেখেনে একটা তাঁর ছুঁচোলো নোটের হাস্যবিষাক্ত খোঁচা খেয়ে খেয়ে আমার গরিব ভালোমানুষ মতগুলি প্রাণের দায়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে দেশছাড়া হয় বা! পাঠক-মহাশয়েরা আমার কথাটা একবার অবধান করুন; আর কিছু নয়, লেখক-মহাশয় আমার কথাটা আপনাদের ভালো করে শুনতে দিচ্ছেন না। আমি একটা কথা বলতে মুখ খোলবার উপক্রম করেছি কি, অমনি তিনি দশটা কথা কয়ে একটা ঘোরতর কোলাহল উত্থাপন করেছেন আর আমার কথাটা একেবারে মাথা তুলতে পারে নি। পাঠকমহাশয়েরা যদি এক পক্ষের কথা শুনতে না পান ও গোলেমালে একটা ভুল বুঝে যান তবে বড়ো দুঃখের বিষয় হবে।

 লেখক-মহাশয়ের নোটের বিরুদ্ধে আমার প্রধান নালিশ ছিল এই যে, আমি যে কথা বলি নি সেই কথা আমার মুখে বসানো হয়েছে। তার উত্তরে তিনি বলেন যে, ‘লেখক কী ভাবে কী কথা বলিয়াছেন তাহার প্রতি তত আমাদের লক্ষ নহে যত

১৬৮