পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

কেননা আমি বলব ‘না’, সম্পাদক-মহাশয় বলবেন ‘হাঁ’, আবার আমি বলব ‘না’, আবার তিনি বলবেন ‘হাঁ’— এমন করে যতক্ষণে না হাঁপিয়ে পড়া যায় ততক্ষণ হয়তো ‘হাঁ’ ‘না’ চালানো যেতে পারে। কিন্তু খুব সম্ভবতঃ এ বিষয়ে সম্পাদক-মহাশয়ের আমার চেয়ে ঢের বেশি অভিজ্ঞতা আছে, সুতরাং এমন স্থলে আমার চুপ করে থাকাই শাস্ত্রসম্মত। কিন্তু সম্পাদক-মহাশয়ের মতে যাই হোক, আমি কখনো বিবিদের অবিনয় অসরলতা ইত্যাদির আনুষঙ্গিকরূপে স্ত্রীস্বাধীনতার উল্লেখ করেছি কি না সেইটি বিবেচ্য স্থল। বিলেতে নিমন্ত্রণসভায় স্ত্রীপুরুষ সকলে মিলে নির্দোষ আমোদপ্রমোদ করে, একটা নতুন ভালো বই উঠলে সে বিষয়ে পরস্পর আপনাদের মতামত ব্যক্ত করে, একটা নতুন যন্ত্র উঠলে গৃহকর্তা তাই নিয়ে অভ্যাগত ব্যক্তিবর্গকে দেখান, গৃহকর্ত্রী রোমে গিয়েছিলেন, সেখানকার প্রসিদ্ধ স্থানের যে-সকল ফোটোগ্রাফ নিয়েছিলেন তাই দেখিয়ে সকলকে আমোদে রাখেন ইত্যাদি প্রসঙ্গ উপলক্ষে কথায় কথায় আমি স্ত্রীস্বাধীনতা সম্বন্ধে নিজের মত ব্যক্ত করি; এর থেকে যদি কোনো বিলাতানভিজ্ঞ ব্যক্তি মনে করে থাকেন যে, shopping করাকেই স্ত্রীস্বাধীনতা বলে বা বিলাতের মহিলারা যা কিছু মন্দ-আচরণ করেন (সত্যই হোক আর জনশ্রুতিই হোক) তারই নাম স্ত্রীস্বাধীনতা, তা হলে বেয়াদবি মাপ করবেন) তাঁদের মস্তিষ্কের দোষ জন্মেছে এ কথা স্বীকার করতেই হয়।

 সত্য-সত্য যা কিছু দোষ করি, একে তো তার জন্যই আমরা ইহকালে পরকালে দায়ী; কিন্তু যে দোষ করি নি তার জন্যেও যদি কৈফিয়ত দিতে হয় তা হলে সংসারের পায়ে গড় করি! সম্পাদকমহাশয় মহা খাপা হয়ে চক্ষু রাঙিয়ে বলছেন, ‘য়ুরোপ ভিন্ন আর কোথাও যে স্ত্রীস্বাধীনতা নাই এমন নহে— জাপানে আছে,

১৭২