পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে খোলা গাড়িতে একটু হাওয়া খেয়ে এলুম ব’লে যদি লোকে কু বলে তা তারা বলুক, কিন্তু যদি আমার স্ত্রী কোনো এক পুরুষের বাড়িতে সমস্ত দিন বা রাত্রি যাপন করে আসে তা হলে লোকে যদি কু ভাবে তা হলে সে কু ভাবাকে যথার্থ একটু সমীহ করে চলতে হয়। সম্পাদক-মহাশয় নানা উদাহরণ প্রয়োগ করে রাজকীয় স্বাধীনতা সম্বন্ধে যা বললেন, সে বিষয়ে তাঁর সঙ্গে আমার মতের ঐক্য হয়। উদ্ধত গর্বিত বিকৃত নীচস্বভাব অ্যাংগ্লো-ইন্‌ডিয়ানরা আমাদের যে রকম নিচু নজরে দেখে তারা যে আপনাদের স্বজাতি-প্রচলিত গ্যালাণ্ট্রি আমাদের পুরস্ত্রীদের প্রতি প্রয়োগ না করবে— তা আশ্চর্য নয়। কিন্তু তাতে বিশেষ কী এল গেল? স্ত্রী পুত্র পরিবার সমেত লাঙুল নাড়তে নাড়তে একটা গর্বস্ফীত অ্যাংগ্লো-ইন্‌ডিয়ানের পা চাটতে যাবার প্রয়োজন কী? অধীনতার প্রতি আমাদের যে রকম অনুরাগ, খোসামোদ আমাদের যে রকম উপজীব্য হয়ে উঠেছে, তাতে হয়তো আমাদের অনেকে স্ত্রীকন্যাগণকে স্বচ্ছন্দে একজন শ্বেতবদনের কাছে নিয়ে যাবেন, যদিও হয়তো নিজের কৃষ্ণচর্ম বন্ধুর কাছে বের করতে কুণ্ঠিত হবেন! সে রকম স্থলে তাঁরা ঠেকে শিখবেন। যদি আপনাদের নিজের স্ত্রীকে রক্ষা করবার বল না থাকে তা হলে নাহয় ট্রেনে প্রভৃতি যাবার সময় বন্ধসন্ধ করে নিয়ে যাবেন, অ্যাংগ্লো-ইণ্ডিয়ান্‌দের কাছ থেকে সহস্র হস্ত দূরে থাকবেন। আমি বলি কি, আমাদের আপনাদের বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে স্ত্রী পুরুষে পরস্পর মেলা-মেশা আলাপ-পরিচয় হোক। নিমন্ত্রণসভায় স্ত্রীলোকেরা উপস্থিত থাকুন। যেখানে নানা প্রকার বিষয় আলোচনা চলছে সেখেনে তাঁরাও যোগ দেন। এই প্রকারে সংকীর্ণস্থানবদ্ধ তাঁদের কুঞ্চিত মন বিস্তার লাভ করুক, স্বাধীন মুক্তবায়ু-সেবনে স্বাস্থ্য উপভোগ করুন।

১৭৮