পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

একাদশ পত্র

আমরা এখন লন্‌ডন ত্যাগ করে এসেছি। লন্‌ডনের জনসমুদ্রে জোয়ার ভাঁটা খেলে তা জানো? বসন্তের আরম্ভ থেকে গর্মির কিছুদিন পর্যন্ত লন্‌ডনের জোয়ার-season। এই সময়ে লন্‌ডন উৎসবে পূর্ণ থাকে— থিয়েটার, নাচ, গান, প্রকাশ্য ও পারিবারিক ‘বল’, আমোদ-প্রমোদে চার দিক ঘেঁষাঘেঁষি ঠেসাঠেসি। ধনী লোকদের বিলাসিনী মেয়েরা রাতকে দিন করে তোলে। আজ তাদের নাচের নেমন্তন্ন, কাল ডিনারের নেমন্তন্ন, পরশু থিয়েটরে যেতে হবে, তরশু রাত্তিরে ম্যাডাম প্যাটির গান শুনতে যেতে হবে— দিনের চেয়ে রাত্তিরের ব্যস্ত ভাব। সুকুমারী মহিলা, যাঁরা দু পা চললে হাঁপিয়ে পড়েন, দুটো কাজ করলে চোখ উলটে চৌকিতে এলিয়ে পড়েন, একটু গরম হলে অবসন্ন হয়ে পাখার বাতাস খেয়ে খেয়ে সারা হন, যাঁদের সুখশান্তির জন্য শত শত মহিলা-সেবকেরা দিন রাত্রি প্রাণপণ করছেন— চৌকিটা সরিয়ে দেওয়া, প্লেটটা এগিয়ে দেওয়া, দরজাটা খুলে দেওয়া, মাংসটা কেটে দেওয়া, পাখাটা কুড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি উপায়ে যাতে কুসুমসকুমারতনু অবলাদের তিলমাত্র শ্রম স্বীকার না করতে হয় তার চেষ্টা করছেন, তাঁরা রাত্তিরের পর রাত্তির নটা থেকে ভোর চারটে পর্যন্ত গ্যাসের ও মানুষের নিশ্বাসে গরম ঘরের মধ্যে অবিশ্রান্ত নৃত্য করছেন; সে আবার আমাদের দেশের মতো অলস নড়ে চড়ে বেড়ানো বাই-নাচের মতো নয়, অনবরত ঘুরে ঘুরে দৌড়ে বেড়ানো। একে শ্যাম্পেনের তরঙ্গ মাথায় গিয়ে আবর্ত তুলেছে, তাতে আবার এই অবিশ্রাম ঘুরপাক, এতে মহা মহা জোয়ান পুরুষের মাথা ঘোরবার কথা (পুরুষদের আবার দু রকম মাথা ঘোরে, শ্যাম্পেন ও ঘুরপাকে

১৮০