পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
একাদশ পত্র

যায়; মাথার ঘিয়ে ও কয়লার গুঁড়োয় মাথাটাও বোধ হয় অত্যন্ত দাহ্য পদার্থ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক দিনের পরে এখানকার সূক্ষ্ম বাতাস টেনে লন‍্ডনের ভারগ্রস্ত বাতাসের প্রভেদ বুঝতে পারছি। Tunbridge Wells অনেক দিন থেকে তার লৌহপদার্থ মিশ্রিত স্বাস্থ্যকর উৎসের জন্যে বিখ্যাত। এই উৎসের জল খাবার জন্যে এখানে অনেক যাত্রীর সমাগম হয়। আমরা এখেনে এসে কল্পনা করলেম— উৎসটা না জানি কী সুন্দর দৃশ্য হবে—চার দিকে পাহাড় পর্বত গাছপালা থাকবে, ‘সারসমরালকুলকূজিত কনককমলকুমুদকহলারবিকসিত সরোবর’ ‘কোকিলকূজন’ ‘মলয়বীজন’ ‘ভ্রমরগুঞ্জন’ দেখতে ও শুনতে পাব, ও অবশেষে এই মনোরম স্থানে বসন্তসখা পঞ্চশরের প্রহার খেয়ে ও এক ঘটি জল খেয়ে বাড়ি ফিরে আসব! ও হরি! গিয়ে দেখি, একটা হাটের মধ্যে একটা ছোটে। গর্ভ পাথর দিয়ে বাঁধানো, সেখেনে একটু একটু করে জল উঠছে, একটা বুড়ি একটা কাঁচের গেলাস হাতে দাঁড়িয়ে আছে!— একটা বুড়ি!— একটি গজেন্দ্রগমনা বিম্বৌষ্ঠী কম্বুকণ্ঠী শুকচঞ্চুনাসা কেশরীমধ্যা কোকিলভাষিণী মধুরহাসিনী বিলাসিনী ষোড়শী নলিনীপত্রের ঠোঙা হাতে করে দাঁড়িয়ে নেই (‘ঠোঙা’ কথাটা বড়ো গ্রাম্য হয়ে পড়ল, ওর সংস্কৃতটা কী?) একটা গাউন-জুতো-পরা বুড়ি এক এক পেনি নিয়ে কাঁচের গেলাসে করে জল বিতরণ করছে ও অবসর-মতে একটা খবরের কাগজে গত রাত্রের পার্লামেণ্টের সংবাদ পড়ছে। চার দিকে দোকান বাজার, গাছপালার কোনো সম্পর্ক নেই; সুমুখেই একটা কশাইয়ের দোকান, সেখেনে নানা চতুষ্পদ ও দ্বিপদের মধ্যে ‘হংসমরালকুলের’ ডানা-ছাড়ানো মৃতদেহ দড়িতে ঝুলছে; এই-সব দেখে আমার মন এমন চটে উঠল যে আমার কোনো

১৮৩