পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

মতে বিশ্বাস হল না যে, এ জল খেলে আমার কোনো প্রকার রোগ নিবারণ হবে বা শরীরের কোনো প্রকার উন্নতি হবে।

 Tunbridge Wells কতকটা পাড়াগাঁয়ের মতো। এটা একটা পাহাড়ে জায়গা। এখেনে এসে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছি। এখানকার আকাশ মুখ-গোঁ-করা নয়, বাড়িগুলো অনাতিথ্যভাবসূচক নয়, পথিকদের মুখ ঘোরতর ব্যস্তভাবময় নয়, রাস্তাগুলো ঘর্ঘরধ্বনিত পাষাণহৃদয় নয়। আসল শহরটা খুব ছোটো, দু পা বেরোলেই গাছপালা মাঠ জঙ্গল দেখতে পাওয়া যায়। শহরটা অবিশ্যি কতকটা লন‍্ডনের ছাঁচে গড়া। বাড়িগুলো লন‍্ডনের মতো থামবারন্দা-শূন্য, ঢালু-ছাত-ওয়ালা সারি সারি একঘেয়ে ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে; অত্যন্ত শ্রীহীন দেখতে। দোকানগুলো তেমনি সুসজ্জিত, পরিপাটী, কাঁচের-জানলা-দেওয়া। কাঁচের ভিতর থেকে সাজানো পণ্যদ্রব্য দেখা যাচ্ছে; কসাইয়ের দোকানে কোনো প্রকার কাঁচের আবরণ নেই, চতুষ্পদদের আস্ত আস্ত শ্রীচরণ ঝুলছে— ভেড়া গোরু শুয়োর বাছুরের নানা অঙ্গ নানা প্রকার ভাবে চোখের সামনে টাঙিয়ে রাখা হয়েছে, হাঁস প্রভৃতি নানা প্রকার বিচিত্র মরা পাখি লম্বা লম্বা গলাগুলো নীচের দিকে ঝুলিয়ে আছে, আর খুব একটা জোয়ান ভুঁড়িওয়ালা ব্যক্তি হাতে একটা প্রকাণ্ড ছুরি নিয়ে কোমরে একটা আঁচলের মতো কাপড় (apron) ঝুলিয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। বিলেতের ভেড়া গোরুগুলো তাদের মোটাসোটা মাংস-চর্বি-ওয়ালা শরীরের জন্যে ও সুস্বাদের জন্য বিখ্যাত, যদি কোনো মানুষ-খেগো সভ্য জাত থাকত তা হলে বোধ হয় বিলেতের কসাইগুলো তাদের হাটে অত্যন্ত মার্ষি দামে বিকোত। আমি একটা কসাই রোগা দেখি নি, এমন জোয়ান মোটা ভীষণাকার জানোয়ার খুব অল্প আছে। এখানকার

১৮৪