পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম পত্র

মাথায় অনায়াসে ধান চাষ করা যায়। এই রকম ধুলোমাখা সন্ন্যাসীর বেশে আমরা অ্যালেক্‌জান্দ্রিয়াতে গিয়ে পৌঁছলেম। রেলের লাইনের দু পারে সবুজ শস্যক্ষেত্র। জায়গায় জায়গায় খেজুরের গাছে থোলো থোলো খেজুর ফ’লে রয়েছে। মাঠের মাঝে মাঝে কুয়ো। মাঝে মাঝে দুই-একটা কোঠাবাড়ি―বাড়িগুলো চৌকোনা, থাম নেই, বারান্দা নেই―সমস্তটাই দেয়ালের মতো, সেই দেয়ালের মধ্যে মধ্যে দুই-একটা জানলা। এই-সকল কারণে বাড়িগুলোর যেন শ্রী নেই। যা হোক আমি আগে আফ্রিকার মাথা থেকে পা পর্যন্ত যে রকম অনুর্বর মরুভূমি মনে করে রেখেছিলুম, চার দিক দেখে তা কিছুই মনে হল না। বরং চার দিককার সেই হরিৎক্ষেত্রের উপর খেজুরকুঞ্জের মধ্যে প্রভাতটি আমার অতি চমৎকার লেগেছিল। অ্যালেক্‌জান্দ্রিয়া বন্দরে আমাদের জন্যে ‘মঙ্গোলিয়া’ স্টীমার অপেক্ষা করছিল। এইবার আমরা ভূমধ্যসাগরের বক্ষে আরোহণ করলেম, আমার একটু-একটু শীত-শীত করতে লাগল। জাহাজে গিয়ে খুব ভালো করে স্নান করলেম, আমার তো হাড়ে হাড়ে ধুলো প্রবেশ করেছিল। স্নান করবার পর অ্যালেক্‌জান্দ্রিয়া শহর দেখতে গেলেম। জাহাজ থেকে ডাঙা পর্যন্ত যাবার জন্যে একটা নৌকা ভাড়া করলেম। এখানকার একটা-একটা মাঝি সার উইলিয়ম জোন্সের দ্বিতীয় সংস্করণ বললেই হয়। তারা গ্রীক ইটালিয়ান ফ্রেঞ্চ্‌ ইংরিজি প্রভৃতি অনেক ভাষায় চলনসই রকম কথা কইতে পারে। শুনলেম ফ্রেঞ্চ্‌ ভাষাই এখানকার সাধারণ ভাষা। রাস্তা ঘাটের নাম, সাইন্‌বোর্ডে দোকানগুলির আত্মপরিচয়, অধিকাংশই ফরাসী ভাষায় লেখা। অ্যালেক্‌জান্দ্রিয়া শহরটি সমৃদ্ধিশালী মনে হল। এখানে যে কত জাতের লোক ও কত জাতের দোকান-বাজার আছে তার ঠিকানা নেই। রাস্তাগুলি পাথর দিয়ে

১৩