পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম পত্র

একজন সুপুরুষের মধ্যে গণ্য হব। আধ ঘণ্টা ধরে সে আমার সর্বাঙ্গ অবিশ্রান্ত দলন করলে; ভূমিষ্ঠকাল থেকে আমি যত ধুলো মেখেছি, আমার শরীর থেকে সব যেন উঠে গেল। শরীরটিকে যথেষ্টরূপে দলিত করে আমাকে আর-একটি ঘরে নিয়ে গেল। সেখানে গরম জল দিয়ে, সাবান দিয়ে, স্পঞ্জ দিয়ে শরীরটা বিলক্ষণ করে পরিষ্কার করলে। পরিষ্করণপর্ব শেষ হলে আরএকটা ঘরে নিয়ে গেল। সেখানে একটা বড়ো পিচকিরি করে গায়ে গরম জল ঢালতে লাগল―হঠাৎ গরম জল দেওয়া বন্ধ করে বরফের মতো ঠাণ্ডা জল বর্ষণ করতে লাগল―এই রকম কখনো ঠাণ্ডা কখনো গরম জলে স্নান করে একটা জলযন্ত্রের মধ্যে গেলেম―তার উপর থেকে, নীচে থেকে, চার পাশ থেকে, জল বাণের মতো গায়ে বিঁধতে থাকে―সেই বরফের মতো ঠাণ্ডা বরুণবাণ-বর্ষণের মধ্যে খানিক ক্ষণ থেকে আমার বুকের রক্ত পর্যন্ত যেন জমাট হয়ে গেল। রণে ভঙ্গ দিতে হল, হাঁপাতে হাঁপাতে বেরিয়ে এলেম। তার পরে এক জায়গায় পুকুরের মতো আছে, আমি সঁতার দিতে রাজি আছি কি না জিজ্ঞাসা করলে। আমি সাঁতার দিলেম না, আমার সঙ্গী সাঁতার দিলেন; তাঁর সাঁতার দেওয়া দেখে তারা বলাবলি করতে লাগল, ‘দেখো দেখো এরা কী অদ্ভুত রকম করে সাঁতার দেয়, ঠিক কুকুরের মতো।’ এতক্ষণে স্নান শেষ হল। আমি দেখলেম, টার্কিশ বাথে স্নান করা আর শরীরটাকে ধোপর বাড়ি দেওয়া এক কথা। তার পরে সমস্ত দিনের জন্য এক পাউন্‌ড্‌ দিয়ে এক গাড়ি ভাড়া করা গেল। প্যারিস্ এক্‌জিবিশন দেখতে গেলেম। তুমি এইবার হয়তো খুব আগ্রহের সঙ্গে কান খাড়া করেছ, ভাবছ আমি প্যারিস এক্‌জিবিশনের বিষয় কী না জানি বর্ণনা করব। কিন্তু দুঃখের বিষয় কী বলব, কলকাতার য়ুনিবর্সিটিতে বিদ্যা-

১৯