পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চম পত্র

জানে না তাকে জলে ছেড়ে দেও, সে অবিশ্রান্ত হাত পা ছুঁড়তে থাকবে; তার কারণ, সে জানে না যে ভেসে থাকবার জন্যে অন্য কৌশল আছে। যে কোনো জন্মে ঘোড়া চালায় নি তাকে ঘোড়া চালাতে দেও, ঘোড়া বিপথে গেলে সে চাবুক মেরে মেরেই তাকে জর্জরিত করবে; কেননা, সে জানে না যে একটু লাগাম টেনে দিলেই তাকে সোজা পথে আনা যায়। কিন্তু ভদ্র ইংরেজদের দেখো, তাঁদের কী সুন্দর মন! মাঝে মাঝে এক-একটি ভদ্র সাহেবকে দেখা যায়, তাঁরা আংগ্লো-ইন‍্ডিয়ানত্বের ঘোরতর সংক্রামক রোগের মধ্যে থেকেও বিশুদ্ধ থাকেন, অপ্রতিহত প্রভুত্ব ও ক্ষমতা পেয়েও উদ্ধত গর্বিত হয়ে ওঠেন না। সমাজশৃঙ্খলচ্ছিন্ন হয়ে সহস্র সহস্র সেবকদের দ্বারা বেষ্টিত হয়ে ভারতবর্ষে থাকা —উন্নত ও ভদ্র মনের এক প্রকার অগ্নিপরীক্ষা। দূর হোক্‌গে, আমি কী কথা বলতে কী কথা পাড়লেম দেখো!— যা হোক, এতক্ষণে জাহাজ সাউথ‍্হ্যাম্প‍্টনে এসে পৌঁচেছে, বঙ্গীয় যাত্রীরা বিলেতে এসে পৌঁছলেন। লন‍্ডন-উদ্দেশে চললেন। ট্রেন্ থেকে নাববার সময় একজন ইংরাজ গার্ড্ এসে উপস্থিত। বিনয়ের সঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে তাঁদের কী প্রয়োজন আছে, কী করে দিতে হবে। তাঁদের মোট নাবিয়ে দিলে, গাড়ি ডেকে দিলে। তাঁরা মনে মনে বললেন, ‘বাঃ! ইংরেজরা কী ভদ্র!’ ইংরেজরা যে এত ভদ্র হতে পারে তা তাঁদের জ্ঞান ছিল না। অবিশ্যি তার হস্তে একটি শিলিং গুঁজে দিতে হল; কিন্তু তা হোক, আমাদের দেশে শ্বেতাঙ্গদের কাছ থেকে একটু আদর ও ভদ্রতা পাবার প্রত্যাশে রাজা-রায়বাহাদুররা কত হাজার হাজার টাকা খরচ করছেন, তবুও ভালো করে কৃতকার্য হতে পারছেন না। এ জেনে এক জন নবাগত বঙ্গযুবক এক জন যেকোনো শ্বেতাঙ্গের কাছ থেকে একটি মাত্র সেলাম পেতে অকাতরে

৫৩