পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চম পত্র

নীচে একখানা, আর-একখানি নিয়ে আমার ছোটো ভাগ্নীটি তাঁর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সহচরীদের ডেকে ছবি দেখতে ঘোরতর ব্যস্ত আছেন। এখানে তোমার নিজের ঘরে তুমি বসে থাকো— দরজাটি ভেজানো, সট্ করে না বলে কয়ে কেউ ঘরের মধ্যে এসে পড়ে না, ঘরে ঢোকবার আগে দরজায় শব্দ করে, ছেলেপিলেগুলো চারি দিকে চেঁচামেচি কান্নাকাটি জুড়ে দেয় নি, নিরিবিলি নিরালা, কোনো হাঙ্গাম নেই।’ স্বদেশের উপর ঘৃণা জন্মাবার সূত্রপাত এই রকম করে হয়। তার পরে একবার যখন তোমার মন বিগড়ে যায় তখন তুমি খিট্‌খিটে হয়ে ওঠ, দেশের আর কিছুই ভালো লাগে না, নানাপ্রকার খুঁটিনাটি ধরতে প্রবৃত্তি হয়। তার পরে যখন বিবিদের সমাজে মিশতে আরম্ভ কর তখন দেশের উপর ঘৃণা বদ্ধমূল হয়ে যায়। প্রায় দেখা যায়, আমাদের দেশের পুরুষরা এখানকার পুরুষসমাজে বড়ো মেশেন না; তার কতকগুলি কারণ আছে। এখানকার পুরুষসমাজে মিশতে গেলে এক রকম বলিষ্ঠ স্ফূর্তির ভাব থাকা চাই; মাথা চুলকোতে চুলকোতে বাধো-বাধো নাকি-সুরে দু-চারটে সসংকোচ ‘হাঁ না’ দিয়ে গেলে চলে না, খুব প্রাণ খুলে কথা কওয়া চাই, পাঁচটা লোক দেখেই একেবারে অভিভূত হয়ে পড়েছি —এ রকম ভাব প্রকাশ না পায়। রাজনীতি প্রভৃতি বিষয়ে অবাধে তোমার স্বাধীন মত ব্যক্ত করবে; তোমাকে কেউ ঠাট্টা করলে তুমি অমনি শরমে মরে যেয়ো না, তুমিও তোমার আলাপীর সঙ্গে ঠাট্টা করে মজা করে ঘর সরগরম করবে। বহুদিনের পর তোমার পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে ‘Hallo my old boy’ বলে খুব সবল সেক্হ্যাণ্ড্ করবে আর খুব গড়‍্গড়্ কথা কয়ে যাবে। কিন্তু বাঙালিদের এ রকম ভাব প্রায় দেখা যায় না। বাঙালি অভ্যাগত ডিনার-টেবিলে তার পার্শ্বস্থ মহিলাটির

৫৭