পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চম পত্র

চার দিককার অভিজ্ঞতা থেকে স্বভাবতঃ ও সাধারণতঃ বাঙালিদের বিলেতে এলে কী কী পরিবর্তন হতে পারে তাই ঠিক করেছি ও সেইগুলি সমষ্টিবদ্ধ করে একটা সমগ্র চিত্র আঁকতে চেষ্টা করছি।

 ইঙ্গবঙ্গদের ভালো করে চিনতে গেলে তাঁদের তিন রকম অবস্থায় দেখতে হয়। তাঁরা ইংরাজদের সুমুখে কিরকম ব্যবহার করেন, বাঙালিদের সুমুখে কিরকম ব্যবহার করেন ও তাঁদের স্বজাত ইঙ্গবঙ্গদের সুমুখে কিরকম ব্যবহার করেন। তাঁদের জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা বলবেন, ‘আমরা তিন জায়গায় সমান ব্যবহার করি, কেননা আমাদের একটা principle আছে।’ কিন্তু সেটা একটা কথার কথা মাত্র, আমি সে কথা বড়ো বিশ্বাস করি নে। একটি ইঙ্গবঙ্গকে এক জন ইংরেজের সুমুখে দেখো, তাঁকে দেখলে তোমার চক্ষু জুড়িয়ে যাবে। কেমন নম্র ও বিনীত ভাব! ভদ্রতার ভারে প্রতি কথায় ঘাড় নুয়ে নুয়ে পড়ছে, মৃদু ধীর স্বরে কথাগুলি বেরচ্ছে; তর্ক করবার সময় অতিশয় সাবধানে নরম করে প্রতিবাদ করেন ও প্রতিবাদ করতে হল বলে অপর্যাপ্ত দুঃখ প্রকাশ করেন, অসংখ্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন, এবং তাঁর অজস্র ভদ্রতা দেখে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সন্তুষ্টমনে প্রার্থনা করতে থাকেন যে তিনি যেন জন্ম-জন্ম এই রকম প্রতিবাদ করেন। কথা ক’ন আর না ক’ন, এক জন ইংরেজের কাছে এক জন ইঙ্গবঙ্গ চুপ করে বসে থাকলেও তাঁর প্রতি অঙ্গভঙ্গী প্রতি মুখের ভাবে বিনয়ের পরাকাষ্ঠা প্রকাশ হতে থাকে। কিন্তু, তাঁকেই আবার তাঁর স্বজাতিমণ্ডলে দেখো, দেখবে তিনিই একজন মহা তেরিয়া-মেজাজের লোক। বিলেতে যিনি তিন বৎসর আছেন, এক-বৎসরের-বিলেত-বাসীর কাছে তাঁর অত্যন্ত পায়া ভারী! এই ‘তিন বৎসর’ ও ‘এক বৎসরের’ মধ্যে যদি কখনও তর্ক ওঠে, তা হলে তুমি ‘তিন বৎসরের’ প্রতাপটা

৬১