পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

prejudice। তুমি হয়তো জান না যে তুমি কেন ঘৃণা করছ। তোমার হয়তো একটা দারুণ কুসংস্কার আছে যে তুমি ব্যতীত তোমার স্বদেশজাত আর-সমস্ত দ্রব্যই মন্দ। আমি এক-এক সময়ে ভাবি, একজন বুদ্ধিমান প্রাণীর মনে কিরকম করে এ রকম অন্ধ কুসংস্কার জন্মাতে পারে। সে দিন এক জায়গায় আমাদের দেশের শ্রাদ্ধের কথা হচ্ছিল— বাপ-মা’র মৃত্যুর পর আমরা হবিষ্য করি, বেশভূষা করিনে ইত্যাদি। শুনে এক জন ইঙ্গবঙ্গ যুবক অধীরভাবে আমাকে বলে উঠলেন যে, ‘আপনি অবিশ্যি, মশায়, এ-সকল অনুষ্ঠান ভালো বলেন না।’ আমি বললেম, ‘কেন নয়? মৃত আত্মীয়ের জন্যে শোক প্রকাশ করাতে আমি তো কোনো দোষ দেখি নে। ভিন্ন ভিন্ন দেশে শোক প্রকাশ করবার ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম আছে। ইংরাজেরা কালো কাপড় প’রে শোক প্রকাশ করে ব’লে শাদা কাপড় পরে শোক প্রকাশ করা অসভ্যতার লক্ষণ মনে কোরো না। আমি দেখছি ইংরেজরা যদি আত্মীয়ের মৃত্যু উপলক্ষে হবিষ্যান্ন খেত, আর আমাদের দেশের লোকেরা না খেত, তা হলে হবিষ্যান্ন খায় না ব’লে আমাদের দেশের লোকের ওপর তোমার দ্বিগুণতর ঘৃণা হত ও মনে করতে হবিষ্যান্ন খায় না ব’লেই আমাদের দেশের এই দুর্দশা, আর হবিষ্যান্ন খেতে আরম্ভ করলেই আমাদের দেশ উন্নতির চরমশিখরে উঠতে পারবে।’ এর চেয়ে কুসংস্কার আর কী হতে পারে! ইঙ্গবঙ্গরা বলেন, দেশে গিয়ে দেশের লোককে সন্তুষ্ট করবার জন্যে দেশের কুসংস্কারের অনুবর্তন করা ভীরুতা— শুদ্ধ তাই নয়, তাঁদের মহামান্য principleএর বিরুদ্ধাচরণ। এ কথা শুনতে বেশ, কিন্তু এই মহাবীরদের একবার জিজ্ঞাসা করো তাঁরা বিলেতে কী করেন। তাঁরা ঘাড় নত করে ইংরাজদের কুসংস্কারের অনুসরণ করেন কি না? তাঁরা জানেন সেগুলি কুসংস্কার, তবু জেনে-শুনে

৬৪