পাতা:য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র

সুখ অনেক পরিমাণে বর্ধিত করে। অনেক ইঙ্গবঙ্গ সুন্দরী landlady দেখে ঘর ভাড়া করেন। এতে তাঁদের সময় কাটাবার যথেষ্ট সুবিধে হয়। বাড়িতে পদার্পণ করেই তাঁর ল্যান‍্ড‍্লেডির যুবতী কন্যার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা করে নেন। দু-তিন দিনের মধ্যে তার একটি আদরের নামকরণ করা হয়, সপ্তাহ অতীত হলে তার নামে হয়তো একটা কবিতা রচনা করে তাকে উপহার দেন। কোনো সন্ধ্যে বেলায় হয়তো রান্নঘরে গিয়ে ল্যান‍্ড‍্লেডি তার কন্যা ও ঘরের দাসীটিকে বিজ্ঞান দর্শন ও মনস্তত্ত্ব সম্বন্ধে দুই-একটা বাঁধা গত শোনাতে থাকেন। তারা তাঁর লম্বাচৌড়া কথাগুলো হজম করতে না পেরে হাঁ করে ভাবে, ইনি একজন কেষ্টবিষ্টুর মধ্যে হবেন। কিন্তু kitchen অঞ্চলে তিনি তাঁর গম্ভীর পাণ্ডিত্যের জন্যে তত বিখ্যাত নন; তাঁর নিজের বাড়ির ও পাশাপাশি দু-একটি বাড়ির দাসী-শ্রেণীর মধ্যে তাঁর রসিকতার অত্যন্ত নামডাক শোনা যায়। এই রকম জনশ্রুতি যে, সে দিন সন্ধ্যে বেলায় সিঁড়ির কাছে তিনি বাড়ির kitchen-maid Pollyর দাড়ি ধরে এমন একটি ঠাট্টা করেছিলেন যে, সে হাসতে হাসতে ছুটে পালিয়ে যায়। সে দিন landladyর মেয়ে তাঁকে এক পেয়ালা চা এনে জিজ্ঞাসা করেছিল যে, চায়ে কি চিনি দিতে হবে? তিনি হেসে বললেন, ‘না নেলি, তুমি যখন ছুঁয়ে দিয়েছ, তখন আর চিনি দেবার আবশ্যক দেখছি নে।’ ইঙ্গবঙ্গগণ বিলেতের এই দাসী-শ্রেণীর বিমল সংসর্গে দিনদিন উন্নতিলাভ করতে থাকেন। আচ্ছা, মেয়েদের সঙ্গে যদি মিশতে চাও, তবে ভদ্রলোকের মেয়েদের সঙ্গে মেশ না কেন? কিন্তু কতকগুলি কারণ আছে, যে জন্যে ভদ্রলোকের মেয়েদের সঙ্গে তত মেশা হয় না। বাঙালিদের উদ্যমের অভাব ও আলস্য বিলেতে এসেও ভালো করে ঘোচে না। তারা যে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে

৭৪