পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

 কিন্তু কথাটা হচ্ছিল স্ত্রীলােকের দৌরাত্ম্য সম্বন্ধে। গােলাপের যে কারণে কাঁটা থাকা আবশ্যক, যেখানে স্ত্রীপুরুষে বিচ্ছেদ নেই সেখানে স্ত্রীলোকেরও সেই কারণে প্রখরতা থাকা চাই, তীক্ষ্ণ কথায় মর্মচ্ছেদ করবার অভ্যাস থাকলে অবলার পক্ষে অনেক সময়েই কাজে লাগে।

 আমাদের গােলাপগুলিই কি একেবারে নিষ্কণ্টক? কিন্তু সে বিষয়ে সমধিক সমালােচনা করতে বিরত থাকা গেল।

 ১৪ অক্টোবর। জিব্রাল্টার পৌঁছনো গেল। মুষলধারায় বৃষ্টি হচ্ছে।

 আজ ডিনার-টেবিলে একটা মােটা আঙুল এবং ফুলাে গোঁফ-ওয়ালা প্রকাণ্ড জোয়ান গােরা তার সুন্দরী পার্শ্ববর্তিনীর সঙ্গে ভারতবর্ষীয় পাখাওয়ালার গল্প করছিল। সুন্দরী কিঞ্চিৎ নালিশের নাকীস্বরে বললেন— পাখাওয়ালারা রাত্রে পাখা টানতে টানতে ঘুমােয়। জোয়ান লােকটা বললে তার একমাত্র প্রতিবিধান হচ্ছে লাথি কিম্বা লাঠি। এবং পাখা-আন্দোলন সম্বন্ধে এই ভাবে আন্দোলন চলতে লাগল। আমার বুকে হঠাৎ যেন একটা তপ্ত শূল বিঁধল। এইভাবে যারা স্ত্রীপুরুষে কথােপকথন করে তারা যে অকাতরে এক সময় একটা দিশি দুর্বল মানব-বিড়ম্বনাকে ভবপারে লাথিয়ে ফেলে দেবে তার আর বিচিত্র কী? আমিও তাে সেই অপমানিত জাতের একটা লােক, আমি কোন্ লজ্জায় কোন্ সুখে এদের সঙ্গে এক টেবিলে বসে খাই এবং একত্রে দন্তোন্মীলন করি। শরীরের সমস্ত রাগ কণ্ঠ পর্যন্ত এল, কিন্তু একটা কথাও বহু চেষ্টাতে সে জায়গায় এসে পৌঁছল না! বিশেষতঃ ওদের ঐ ইংরাজি ভাষাটা বড়ােই বিজাতীয় রকমের ভাষা― মনটা একটু বিচলিত হয়ে গেলেই ও ভাষাটা আর কিছুতেই মনের মতাে কায়দা করে উঠতে

১১৪