‘বেচারার অপরাধ কী দেখা যাক! ভোরের বেলা আহার করে বেরিয়েছে, সমস্ত দিন খেটেছে। হতভাগা আরো দুটো পয়সা বেশি উপার্জন করবার আশায় রাত্রের বিশ্রামটা তোমাকে দু-চার আনায় বিক্রয় করেছে। নিতান্ত গরিব ব’লেই তার এই ব্যবসায়, বড়োসাহেবকে ঠকাবার জন্যে সে ষড়যন্ত্র করে নি।
‘এই ব্যক্তি রাত্রে পাখা টানতে টানতে মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে পড়ে— এ দোষটা তার আছে বলতেই হবে।
‘কিন্তু আমার বোধ হয় এটা মানবজাতির একটা আদিম পাপের ফল। যন্ত্রের মতো বসে বসে পাখা টানতে গেলেই আদমের সন্তানের চোখে ঘুম আসবেই। সাহেব নিজে একবার পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
‘এক ভৃত্যের দ্বারা কাজ না পেলে দ্বিতীয় ভৃত্য রাখা যেতে পারে, কিন্তু যে কাপুরুষ তাকে লাথি মারে সে নিজেকে অপমান করে। কারণ, তখনি তার একটি প্রতিলাথি প্রাপ্য হয়— সেটা প্রয়োগ করবার লোক কেউ হাতের কাছে উপস্থিত নেই এইটুকু মাত্র প্রভেদ।
‘তোমরা অবসর পেলেই আমাদের বলে থাক যে, তোমাদের মধ্যে যখন বাল্যবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক কুপ্রথা প্রচলিত তখন তোমরা রাজ্যতন্ত্রের মধ্যে কোনো স্বাধীন অধিকার প্রাপ্তির যোগ্য নও।
‘কিন্তু তার চেয়ে এ কথা সত্য যে, যে জাত নিরাপদ দেখে দুর্বলের কাছে ‘তেরিয়া’— অর্থাৎ তোমরা যাকে বল ‘বুলি’— যার কোনো বাংলা প্রতিশব্দ নেই— অপ্রিয় অশিষ্ট ব্যবহার যাদের স্বভাবতঃ আসে, কেবল স্বার্থের স্থলে যারা নম্রভাব ধারণ করে, তারা কোনো বিদেশীরাজ্য-শাসনের যোগ্য নয়।