পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি : খসড়া

ছিল ঠিক তাই আছে। মনে করছ, এ একটা আলস্যের নির্‌বুদ্ধিতামাত্র। কিন্তু আমরা মুখে যাই বলি আমাদের আসল কথাটা বুঝে দেখো। আসল কথাটা হচ্ছে, আমরা কাজ করতে পারব না, কিন্তু তা বলে আমাদের অধিক লজ্জার বিষয় নেই—কেননা, আমরা আমাদের কাজ শেষ করেছি, আজকাল আমাদের কাজ ফুরিয়ে গেছে। আমরা মানবসভ্যতার খানিকটা ভিত্তি গেঁথে বিশ্রাম করতে বসেছি— এখন তােমাদের পালা, তােমরা কাজ করো। অবিশ্বাস কর যদি, অকর্মণ্য বলে যদি লজ্জা দাও, তবে আমরা বলব― তােমাদের ঐ তীক্ষ্ণ ঐতিহাসিক কোদাল দিয়ে ভারতভূমি থেকে যুগসঞ্চিত বিস্মৃতির মৃত্তিকাস্তর উঠিয়ে দেখাে মানবসভ্যতার ভিত্তিতে আমাদের হস্তচিহ্ন আছে কি না। তােমরা যে নতুন কাণ্ড করতে আরম্ভ করে দিয়েছ এখনাে তার শেষ হয় নি, এখনাে তার সমস্ত সত্য মিথ্যা স্থির হয় নি। মানব-অদৃষ্টের যা চিরন্তন সমস্যা এখনাে তার কোনােটার মীমাংসা হয় নি। তােমরা অনেক জেনেছ, অনেক পেয়েছ, কিন্তু সুখ পেয়েছ কি? আমরা যে বিশ্বসংসারকে মায়া বলে বসে আছি এবং তােমরা যে একে ধ্রুব সত্য বলে খেটে মরছ, তােমরা কি আমাদের চেয়ে বেশি সুখী হয়েছ? তােমরা যে বর্তমান সভ্যতাকে পরম জটিল করে প্রচণ্ড জীবিকাসংগ্রাম বাধিয়ে দিয়েছ, এর শেষ ফল কি তােমরা দেখতে পাচ্ছ? তােমরা যে অহর্নিশি নুতন নূতন অভাব আবিষ্কার করে দরিদ্রের দারিদ্র্য উত্তরােত্তর বাড়াচ্ছ, স্বাস্থ্যজনক গৃহের বিশ্রাম থেকে অবিশ্রাম কর্মের উত্তেজনায় টেনে নিয়ে যাচ্ছ, কর্মকে সমস্ত জীবনের কর্তা করে প্রবল উন্মাদনাকে বিশ্রামের স্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছ, এমনকি স্ত্রীলােকদেরও গৃহকর্ম থেকে বের করে হয় আমােদর মত্ততা নয় জীবনের রণক্ষেত্রে টেনে নিয়ে যাচ্ছ, তােমরা

১৪৫