পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি : খসড়া

ছায়া― এও সেই রকম। সমুদ্রের এবং আকাশের সেই আশ্চর্য রঙ দেখে কেবল মনে হচ্ছিল ঠিক এইটেকে ব্যক্ত করতে পারি এমন ভাষা কোথায়? আবার তখনি মনে হল দরকার কী? আমার মধ্যে এ চঞ্চলতা কেন? এই সমুদ্রের এবং আকাশেরই মতাে আমার মনের সমুদয় চেষ্টা নির্বাণ লাভ করে না কেন? হৃদয়ের সমুদয় তরঙ্গকে একেবারে থামিয়ে দিয়ে কেন কেবল চেয়ে থাকি নে? এই বৃহৎকে ছােটোর মধ্যে বেঁধে আপন আয়ত্তের মধ্যে পেতে চাই কেন? সবই ধরতে হবে, রাখতে হবে এই কেবল চেষ্টা! অনেক সময় এই রকম দুশ্চেষ্টার বশে, যতটুকু পাওয়া যেতে পারে তাও ভালো করে পাবার সময় থাকে না।

 কিন্তু মনে হয় সমুদ্র এবং আকাশের মধ্যেকার এই দুর্লভ সন্ধ্যাটুকু যদি পারিজাতপুষ্পের মতাে তুলে নিয়ে কারও হাতে না দিতে পারি তবে কিছুই হল না। এই আলাে এই শান্তি কেবল চেয়ে দেখবার এবং মুগ্ধ হবার জন্যে নয়, কিন্তু মানুষের ভালােবাসার উপরে এই আলাে ফেলবার জন্যে। ঠিক এই উজ্জ্বল ম্লান নিভৃত উদার সন্ধ্যার ঠিক মর্মস্থলে যদি আমরা দুজনে দাঁড়াতে পারি তা হলে আমরা যেন আপনাদের আরও বেশি বুঝতে পারি, আরও বেশি ভালােবাসি। কারণ, ভালােবাসা বােঝাতে গেলে সৌন্দর্যের ভাষা চাই এবং চারি দিকের নিস্তব্ধতা চাই। এমন আলােক, এমন বর্ণ, এমন ভাষা আমরা নিজের মধ্যে কোথায় পাব! এই বৃহৎ প্রকৃতি যখন তার একটা চরম মুহূর্তে আমাদের আচ্ছন্ন ক’রে আমাদেরই অন্তরের কথা ব্যক্ত ক’রে বলে তখন আমাদের আর-কোনাে চেষ্টার আবশ্যক করে না— কেবল ভাললবাসবার পূর্ণ অবসর পাওয়া যায়, ভালােবাসা প্রকাশ করবার আবশ্যকটুকুও থাকে না। এ কথা হয়তাে সকলে বুঝতে পারবে

১৫১