পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট

লাগল।) আমাদের দক্ষিণে বামে তুষাররেখাঙ্কিত সুনীল পর্বতশ্রেণী। বামে অরণ্য এবং ডাইনে পাহাড়ের তলদেশে শহর ও শস্যক্ষেত্র। কী ঘন ছায়াস্নিগ্ধ অরণ্য! যেখানে অরণ্যের বিচ্ছেদ সেইখান থেকে অমনি একটা দৃশ্য খুলে যাচ্ছে― শস্যক্ষেত্র তরুশ্রেণী ও পর্বত। একটা পর্বতশৃঙ্গের উপরে একটা পুরােনাে দুর্গ দেখা যাচ্ছে। এবং তলদেশে একটি ছােটো গ্রাম। যত এগােচ্ছি অরণ্যপর্বত খুব ঘন হয়ে আসছে। গাড়িতে আলাে দিয়ে গেল। এইবার বােধ হয় পর্বতভেদী মণ্ট্‌সেনিস গহ্ব‌র আসবে। আজ রীতিমত পর্বতের জায়গায় এসে পড়েছি। এই অরণ্যপর্বতের মাঝে মাঝে যে গ্রামগুলি আসছে সেগুলাে তেমন উদ্ধত শুভ্র পরিপাটি নয়— একটু যেন ম্লান, দরিদ্র, নিভৃত। একটি-আধটি চর্চের চূড়া আছে মাত্র, কিন্তু কারখানার ঊর্ধ্বমুখী ধূমােদ্‌গারী ব্যংহিতশুণ্ড নেই। আর-একটা ভাঙা দুর্গ। শাদা উপলপথের মধ্যে দিয়ে একটি ছােটো অগভীর নদীস্রোত চলেছে। ক্রমে একটু একটু করে পাহাড়ের উপর ওঠা যাচ্ছে। সাপের মতাে পর্বতপথ একে বেঁকে চলেছে। চষা ক্ষেত ঢালু পাহাড়ের উপর সােপানের মধ্যে থাকে থাকে উঠেছে। পর্বতস্রোত স্বচ্ছ সলিলরাশি নিয়ে সংকীর্ণ উপলপথ দিয়ে ঝরে পড়ছে। মাঝে মাঝে প্রায়ই একটা একটা রেলোয়ে গহ্বর এসে প্রাণ হাঁপিয়ে দিচ্ছে। মণ্ট্‌সেনিস টানেল এখনি আসবে— বােধ হয় দম আটকে মরব। দু ধারে fir গাছ দেখা দিয়েছে। আমাদের ডান পাশে বালি ও পাথরের শাদা প্রশস্ত জলপথ। তারই এক ধার দিয়ে জল নেবে আসছে― তার পরপারে দীর্ঘ fir গাছের অরণ্য, তারই পর থেকে পর্বত উঠেছে। এইবার টানেলে ঢুকছি। ১ বাজতে ১৮ মিনিট। ১ বেজে দশ মিনিটে বেরোলুম। ফ্রান্‌স। দক্ষিণে এক জলস্রোত ফেনিয়ে ফেনিয়ে চলেছে। ফরাসী জাতির মতাে

১৬৪