পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট

কৌতুকপ্রিয়া, বিবিধ বিলাসচাতুরী জানে। ঐ দু-তিন শাখায় বিভক্ত হয়ে সুদূর দক্ষিণে চলে গেল। আবার পর্বতের এক জায়গায় মােড় ফিরে ওর সঙ্গে দেখা হবে কি না কে জানে। সেই প্রত্যাশায় রইলুম।― ফ্রান্‌সের গাড়ি ইটিলির চেয়ে অনেক বেগে চলে— আমার লেখা দায় হয়ে এসেছে। বহুকষ্টে লিখতে হচ্ছে।

 আবার সে বাঁয়ে এসেছে। দক্ষিণে পর্বতগুলাে একেবারে হঠাৎ উঁচু হয়ে উঠেছে। বিচিত্র শস্যক্ষেত্র। মাঝে মাঝে ক্ষেতের মধ্যে খড়ের গাদা, পাহাড়ের গায়ে বিরলসন্নিবিষ্ট বাড়ি। স্রোত এখনাে বাঁ দিকে চলেছে। সেই অলিভ এবং দ্রাক্ষাকুঞ্জ অনেক কমে গেছে। বিচিত্র শস্যক্ষেত্র এবং সুদীর্ঘ poplar-শ্রেণী। ভুট্টা, তামাক, নানা শাক-সবজি। মনে হয় কেবলই বাগানের শ্রেণী। এই কঠিন পর্বতের মধ্যে মানুষ বহুদিন থেকে বহু যত্নে প্রকৃতিকে বশ করে তার উচ্ছৃঙ্খলতা হরণ করেছে। প্রত্যেক ভূমিখণ্ডের উপরে মানুষের কত যত্ন ও ভালােবাসা প্রকাশ পাচ্ছে। প্রকৃতিও তার প্রচুর প্রতিদান দিচ্ছে। এখানকার লােকেরা যে আপনার দেশকে ভালােবাসবে তার আর কিছু আশ্চর্য নেই। কত যত্নে আপনার দেশকে তারা আপনার করছে, একটি বিঘাও যেন অনাদরে ফেলে রাখে নি। আপন বাসস্থানকে কানন করে তুলেছে। এর জন্যে যদি প্রাণ না দেবে তাে কিসের জন্যে দেবে! আমাদের দেশ অযত্নে অনাদরে পড়ে আছে― কোথাও জঙ্গল হচ্ছে, কোথাও পাষাণস্তূপে কঠিন হয়ে আছে, কত ধনরত্ন গুপ্ত পড়ে রয়েছে। আমাদের কাছে আমাদের দেশের কোনাে মূল্য নেই।― চমৎকার ব্যাপার! এ কেবলই বাগান। পর্বতের মধ্যে, নদীর ধারে, হ্রদের তীরে পপলার-উইলো-বেষ্টিত বাগান—সমস্ত ছবির মতাে। এইমাত্র বামে পর্বতের পদতলে এক হদ দেখা গেল। বিস্তীর্ণ,

১৬৬