পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট

কিছুতেই অভ্যেস হয়ে যাওয়া উচিত না― যেমন নাচ― দূরবীন করা― গান-বাজনার সময়ে গল্প জুড়ে দেওয়া।

 সেদিন French Exhibitionএ একজন বিখ্যাত artistরচিত একটি উলঙ্গ সুন্দরীর ছবি দেখলুম। কী আশ্চর্য সুন্দর! দেখে কিছুতেই তৃপ্তি হয় না। সুন্দর শরীরের চেয়ে সৌন্দর্য পৃথিবীতে কিছু নেই― কিন্তু আমরা ফুল দেখি, লতা দেখি, পাখি দেখি, আর পৃথিবীর সর্বপ্রধান সৌন্দর্য থেকে একেবারে বঞ্চিত। মর্তের চরম সৌন্দর্যের উপর মানুষ স্বহস্তে একটা চির অন্তরাল টেনে দিয়েছে। কিন্তু সেই উলঙ্গ ছবি দেখে যার তিলমাত্র লজ্জা বােধ হয় আমি তাকে সহস্র ধিক্কার দিই। আমি তাে সুতীব্র সৌন্দর্য-আনন্দে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলুম, আর ইচ্ছে করছিল আমার সকলকে নিয়ে দাঁড়িয়ে এই ছবি উপভােগ করি। বেলি যদি বড়ো হ’ত তাকে পাশে নিয়ে দাঁড়িয়ে আমি এ ছবি দেখতে পারতুম। এ রকম উলঙ্গতা কী সুন্দর! এই ছবি দেখলে সহসা চৈতন্য হয়— ঈশ্বরের নিজহস্তরচিত এক অপূর্ব সৌন্দর্য পশু-মানুষ একেবারে আচ্ছন্ন করে রেখেছে এবং এই চিত্রকর মনুষ্যকৃত সেই অপবিত্র আবরণ উদ্‌ঘাটন করে সেই দিব্য সৌন্দর্যের একটা আভাস দিয়ে দিলে। এই দেহখানির শুভ্র কোমলতা এবং প্রত্যেক সুঠাম ভঙ্গিমার উপর বিশ্বকর্মার, সেই অসীমসুন্দরের, অঙ্গুলির স্পর্শ দেখা যায় যেন। এ কেবলমাত্র দেহের সৌন্দর্য নয়— একটি প্রেমপূর্ণ সুকোমল নারীহৃদয়, একটি অমর সুন্দর মানবাত্মা এরই মধ্যে বাস করে। তারই ভালােবাসা, তারই লাবণ্য এর সর্বত্র উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে। এই উলঙ্গ চিত্রে রমণীর সেই হৃদয়ের কোমলতা এবং আত্মার শুভ্র জ্যোতি ব্যক্ত করছে, মানব-অন্তঃকরণের চিরপ্রচ্ছন্ন রহস্য কতকটা প্রকাশ করে দিচ্ছে।

১৮২