পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি : খসড়া

পুরাকালের মধ্যে গহ্বর খনন করে যতই প্রাচীন খনিজপিণ্ড তুলে আনাে-না কেন তা নিতান্ত অকর্মণ্য। বরঞ্চ য়ুরোপীয়েরা তাকে ব্যবহারের মধ্যে আনতে পারে, কারণ তাদের হাতে সেই অগ্নিশিখা আছে। আমরা তাকে নিয়ে কেবল খেলা করব, কিন্তু তার যথার্থ ব্যবহার করতে পারব না। বর্তমানকালে প্রাচীন আর্যশাস্ত্র নিয়ে আমরা যে রকম খেলা আরম্ভ করেছি তাই দেখে আমার মনে এই কথা উদয় হল। আমরা মনে করছি পুনর্বার মস্তকের পশ্চাদ্‌ভাগে টিকি প্রচলিত করে এবং হবিষ্যান্ন খেয়ে আমরা প্রাচীন আর্যজাতি হব। এ দিকে য়ুরোপীয়েরা আমাদের শাস্ত্র থেকে প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস ও শব্দবিজ্ঞান উদ্ধার করছে, আমরা যে যার ঘরে বসে নবােদ্‌ভূত টিকি -আন্দোলন-পূর্বক তাদের পরম মূর্খ বলে বিদ্রূপ করছি।


 আজ আর-একজন সহযাত্রীর সঙ্গে বহুক্ষণ আলাপ হল। নতুন ভারতবর্ষে যাচ্ছে। ভারতবর্ষীয় ইংরেজের আচরণ সম্বন্ধে তাকে অনেক কথা বললাম। সে বললে: English people are very selfish, they can be very nice and all that so long as their self-interest is untouched but ....

 আজ ডিনার-টেবিলে একটা মস্ত জোয়ান, মােটা আঙুল এবং ফুলে গোঁফ-ওয়ালা, গােরা তার সুন্দরী পার্শ্ববর্তিনীর সঙ্গে ভারতবর্ষীয় পাখাওয়ালার গল্প করছিল। সুন্দরী উল্লেখ করলে, পাখওয়ালারা পাখা টানতে টানতে ঘুমােয়। গৌরাঙ্গ বললে, তার উপায় হচ্ছে লাথি কিম্বা লাঠি। এবং তাই নিয়ে উভয়ে মিলে ঘোঁট চলতে লাগল। আমার এমন অন্তর্দাহ হচ্ছিল বলতে পারি নে। এদের এমন সভ্যতা যে, এদের মেয়েদের পর্যন্ত দয়ামায়া নেই।

১৯৭