পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি : খসড়া

 Mrs Fraser আমাকে tea partyতে নিমন্ত্রণ করেছিল। আমি Browning পড়ছিলুম দেখে সে ভারী আশ্চর্য হয়ে গিয়ে ছিল।

 সিঁড়ি দিয়ে ওঠবার সময় একজন বৃদ্ধ লােক এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করলে: Are you not one of the Tagores? আমি বললুম, হাঁ। সে বললে, তােমার sisterকে কোন্-এক পার্টিতে দেখেছিলুম, তােমার মুখ দেখেই তার সঙ্গে সাদৃশ্য টের পেয়েছিলুম— My name is Schiller ইত্যাদি।

 সমুদ্রে চন্দ্রোদয় দেখলে মনের মধ্যে এমন একটা বৈরাগ্য, এমন একটা ঔদাস্য এনে দেয়। এই অসীম সমুদ্র এই অনন্ত রাত্রির এক ধারে একটুখানি আলো, একটুখানি ঝিকিমিকি। মনে হয় আমাদের জীবন এই রকমের― অসীম সংশয়ের মধ্যে একটুখানি বিষণ্ণ দিশাহারা আলােকরেখা, বাঁচবে কি মরবে কিছু ঠিকানা নেই। ঐ সমুদ্রের পরপারে আস্তে আস্তে নিবে যাবে, অসীম জলরাশি গম্ভীর মৃত্যুর গান গাবে— তার পরে আবার আঁধার রাত্রি। মনে হয় আমাদের জীবন প্রকৃতির আভ্যন্তরিক কোন্-এক শক্তির ক্ষণিক চেষ্টা, ক্ষণিক উত্থান; থেকে থেকে অবিশ্রাম মাথা তুলে উঠছে, কিন্তু চার দিক থেকে অসীম জড় এবং অসীম মৃত্যু এসে তাকে আচ্ছন্ন করে নির্বাপিত করে দিচ্ছে। বহু চেষ্টায় প্রকৃতি যেমনি আপন অন্তর্নিহিত প্রতিভাকে পুষ্প-আকারে বিকশিত করে তুলছে অমনি দেখতে দেখতে মাটি তাকে টেনে মাটি করে দিচ্ছে। ইতস্ততবিক্ষিপ্ত বিন্দু বিন্দু জীবনের তুলনায় এই চিরস্থায়ী চিরনীরব মৃত্যু এই সর্বব্যাপ্ত জড়ত্বের অবিশ্রাম অলক্ষ্য মাধ্যাকর্ষণ কী প্রবল! যেমনি জীবন শ্রান্ত হয়ে আসে, যেমনি চেষ্টা একটু শিথিল হয়ে আসে, অমনি ঝরে যেতে হয়, পড়ে যেতে হয়― অমনি

২১৯