পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট

ভালােবাসা-লালায়িত কল্পনাক্লিষ্ট যৌবন, আমার নিশ্চেষ্ট নিরুদ্যম চিন্তাশীল অতিব্যথিত জীবনের স্মৃতি এই সূর্যকিরণে এই তন্তুবায়ুহিল্লোলে সুদূর মরীচিকার মত আমার স্বপ্নভারনত দৃষ্টির সামনে জেগে উঠছে। আমি প্রাচ্য, আমি আসিয়াবাসী, আমি বাংলার সন্তান, আমার কাছে য়ুরােপীয় সভ্যতা সমস্ত মিথ্যে— আমাকে একটি নদীতীর, একটি দিগন্তবেষ্টিত কনকসূর্যাস্তরঞ্জিত শস্যক্ষেত্র, একটুখানি বিজনতা, খ্যাতিপ্রতিপত্তিহীন প্রচণ্ডচেষ্টাবিহীন নিরীহ জীবন এবং যথার্থ নির্জনতাপ্রিয় একাগ্রগভীর ভালােবাসাপূর্ণ একটি হৃদয় দাও― আমি জগদ্‌বিখ্যাত সভ্যতার গৌরব, উদ্দাম জীবনের উন্মাদ আবর্ত এবং অপর্যাপ্ত যৌবনের প্রবল উত্তেজনা চাই নে।

 Schiller একজন জর্মান সহযাত্রী আমাকে বলছিল তুমি যদি তােমার গলার রীতিমত চর্চা করো তা হলে আশ্চর্য উন্নতি হতে পারে: You have a mine of wealth in your voice। প্রথম বারে যখন ইংলন্‌ডে ছিলুম তখন যদি এই কাজ করতুম তা হলে মন্দ হত না। আর কিছু না হােক নিদেন পক্ষে হয়তাে একটা উপার্জনের পন্থা থাকত।

 ডেকে বসে খানিকটা Alphonse Daudet পড়ছিলুম। মাঝে একবার উঠে দেখলুম— দু ধারে ধূসরবর্ণ বালুকাস্তূপ, জলের ধারে ধারে একটু একটু বনঝাউ এবং অর্ধশুষ্ক তৃণ উঠেছে― আমাদের দক্ষিণে সেই বালুকাস্তূপের মধ্য দিয়ে এক দল আরব শ্রেণীবদ্ধ উট বােঝাই করে নিয়ে চলেছে― প্রখর সূর্যালােক এবং ধূসর মরুভূমির মধ্যে তাদের নীল কাপড় এবং শাদা পাগড়ি ছবির মতাে দেখাচ্ছে। কেউ বা বালুকাগহ্বরের ছায়ায় পা ছড়িয়ে অলসভাবে শুয়ে আছে, কেউ বা নমাজ পড়ছে, কেউ বা নাসারজ্জু ধরে অনিচ্ছুক উটকে

২২২