পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

তার সঙ্গে সহৃদয়তা একান্ত আবশ্যক। স্ত্রীলােকের সম্বন্ধেও তাঁরা কেন সেইরূপ বলেন না যে, কেবলমাত্র সেই প্রেম এবং গৃহকর্মপটুতাই স্ত্রীলােকের পক্ষে যথেষ্ট নয়— তাঁর মনুষ্যত্বসাধনের জন্যে বুদ্ধিবিদ্যার চর্চাও নিতান্ত আবশ্যক।

 যদি এমন কথা কেউ বলেন ‘আমাদের সামর্থ্য নেই’ অথবা ‘আমাদের রমণীদের সময় নেই’, সে স্বতন্ত্র। যদি কোনো ব্যবসায়ী লােক বলেন ‘পড়াশুনা করা, সংগীতশিল্প আলােচনা করা, শরীর মনের স্বাস্থ্য ও প্রফুল্লতা সাধন করার অবসর অথবা শক্তি আমার নেই, আমার সমস্ত সময় এবং সমস্ত অর্থ ব্যবসায়ে না লাগালে নিতান্তই চলে না’, তবে আর কী বলব? বলব, দুঃখের বিষয়। কিন্তু এ কথা বলব না— ব্যবসায়ীর পক্ষে শরীর মনের উন্নতিসাধনের চেষ্টা একেবারে অনুচিত।

 বাড়ির চারি দিকে ফাঁকা স্থান না থাকলেও বাস করা চলে এবং স্ত্রীলোেকদের শরীর মনের অপরিণতি সত্ত্বেও ঘরকর্নার কাজ চলে আসছে, কিন্তু তাই বলে বাগান করা যে অর্থের অসৎকার এবং স্ত্রীলােকদের মনুষ্যোচিত সুশিক্ষা দেওয়া যে সময় ও শক্তির অপব্যয় তা কৃপণস্বভাব লােকের কথা। এবং কোনাে অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও যাঁরা কেবলমাত্র কল্পনাবলে সুশিক্ষিতা রমণীদের প্রতি হৃদয়হীনতা প্রভৃতি অমূলক অপবাদ আরােপ করে থাকেন তাঁরা যে কেবলমাত্র আপনাদের অজ্ঞতা প্রকাশ করেন তা নয়, তাঁরা আপনাদের স্বাভাবিক বর্বরতার পরিচয় দিয়ে থাকেন।

 যাঁদের এ বিষয়ে কিছুমাত্র অভিজ্ঞতা আছে তাঁরা এই স্বতঃসিদ্ধ সত্যটুকু পুনশ্চ জানতে পেরেছেন যে, রমণী স্বভাবতঃই রমণী। এবং শিক্ষা এমন একটা অত্যাশ্চর্য ইন্দ্রজালবিদ্যা নয় যাতে করে নারীকে পুরুষ করে দিতে পারে। তাঁরা এইটে দেখেছেন, শিক্ষিতা

২৬