পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

ঘটনা থেকে একটা বিশ্বাস অলক্ষিতভাবে মনের মধ্যে স্থানলাভ করেছে, কোনো রকম বহুল প্রমাণের অপেক্ষা রাখে নি। এই জন্যে আমার এ-সমস্ত কথাই কাঁচা, গাছের পল্লবের মতো কাঁচা, অল্প আঘাতেই ছিন্ন হয়ে যায়, কিন্তু গাছের পক্ষে সে অত্যাবশ্যক এবং দর্শকের পক্ষেও হয়তো তার এক প্রকার স্নিগ্ধ সৌন্দর্য থাকতে পারে।


বাসস্থানের ব্যবস্থা অনেক রকমের হতে পারে। এক, বসে বসে গভীর ভিত্তি খনন ক’রে, মেপেজুখে, একটি ইঁটের পরে আর-একটি ইঁট বসিয়ে দৃঢ় অট্টালিকা নির্মাণ করা; কিন্তু তা সময় ও ব্যয়-সাপেক্ষ এবং সেটা কাঁধে করে টেনে নিয়ে বেড়াবার যো নেই। আর এক রকম আছে, তাঁবুর বন্দোবস্ত; তার অনেক উপস্থিত সুবিধা আছে।

 ভ্রমণকালে আমি এই রকমের একটা তাঁবু আশ্রয় করে ঘুরেছিলুম। বসে বসে অসীম ধৈর্য সহকারে কোথাও মতের পাকা ইমারত বানাবার চেষ্টা করি নি। যথেষ্ট সময়ও ছিল না এবং আমার মানসিক স্বভাবটাও ঐ রকম ভিটেছাড়া।

 যখন চেয়ে দেখি সংসারপথের দুই ধারে বড়ো বড়ো লক্ষ্মীমন্ত লোক বেড়াটি ফেঁদে, দালানটি তুলে, গোলাঘরটি পরিপূর্ণ ক’রে, তুলসীতলটি বাঁধিয়ে, উঠোনটি তক্‌তকে ক’রে বংশপরম্পরায় বেশ হৃষ্টপুষ্ট সন্তুষ্ট হয়ে বাস করছে— অবশিষ্ট পৃথিবী অবশিষ্ট লোকের জিম্মায় ছেড়ে দিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠানটুকুর সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠ পরিচয় বন্ধন করেছে— তখন আমার লোভ হয়; গুটিকতক অত্যন্ত পাকা বিশ্বাসের মধ্যে মানসিক গার্হস্থ্য স্থাপন করে একটি জায়গায় স্থায়িত্ব লাভ করবার জন্যে ক্ষণেককাল মন ব্যাকুল হয়; কিন্তু পরক্ষণেই

৩৬