পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

এই অবসরে কতকটা বুঝতে পারা যেত, কিন্তু তার সঙ্গে সমুদ্রপীড়ার সংযােগ হওয়াতে ব্যাপারটা অপেক্ষাকৃত জটিল হয়ে পড়েছিল।

 এ দিকে লােকটা কী মনে করছে! অন্ধকারে পরের ক্যাবিনে ঢুকে বেরােবার নাম নেই― খট্ খট্ শব্দে দশ মিনিট কাল জিনিসপত্র হাৎড়ে বেড়ানাে― এ কি কোনাে সদ্‌বংশীয় সাধু লােকের কাজ! মন যতই ব্যাকুল হয়ে উঠছে শরীর ততই গলদ্‌ঘর্ম এবং কণ্ঠাগত অন্তরিন্দ্রিয়ের আক্ষেপ উত্তরােত্তর অবাধ্য হয়ে উঠছে। অনেক অনুসন্ধানের পর যখন হঠাৎ দ্বার-উদ্‌ঘাটনের গােলকটি, সেই মসৃণ চিকণ শ্বেতকাচনির্মিত দ্বারকর্ণটি হাতে ঠেকল, তখন মনে হল এমন প্রিয়স্পর্শসুখ বহুকাল অনুভব করা হয় নি। দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ে নিঃসংশয়চিত্তে তার পরবর্তী ক্যাবিনের দ্বারে গিয়ে উপস্থিত। গিয়েই দেখি আলাে জ্বলছে, কিন্তু মেঝের উপর পরিত্যক্ত গাউন পেটিকোট প্রভৃতি স্ত্রীলােকের গাত্রাবরণ বিক্ষিপ্ত। আর অধিক কিছু দৃষ্টিপথে পড়বার পূর্বেই পলায়ন করলুম। প্রচলিত প্রবাদ অনুসারে বারবার তিনবার ভ্রম করবার অধিকার সকলেরই আছে, কিন্তু তৃতীয়বার পরীক্ষা করতে আমার আর সাহস হল না। এবং সেরূপ শক্তিও ছিল না। অবিলম্বে জাহাজের ছাতে গিয়ে উপস্থিত হলুম। সেখানে বিহ্বলচিত্তে জাহাজের কাঠরার ’পরে ঝুঁকে পড়ে শরীর মনের একান্ত উদ্‌বেগ কিঞ্চিৎ লাঘব করা গেল। তার পরে বহুলাঞ্ছিত অপরাধীর মতাে আস্তে আস্তে কম্বলটি গুটিয়ে তার উপর লজ্জিত নতমস্তক স্থাপন করে একটি কাঠের বেঞ্চিতে শুয়ে পড়লুম।

 কিন্তু, কী সর্বনাশ! এ কার কম্বল! এ তাে আমার নয় দেখছি! যে সুখসুপ্ত বিশ্বস্ত ভদ্রলােকটির ঘরের মধ্যে রাত্রে প্রবেশ করে দশ মিনিট-কাল অনুসন্ধানকার্যে ব্যাপৃত ছিলুম, নিশ্চয়

৬৬