পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

মুগ্ধ হবার জন্যে নয়, মানুষের উপর নিক্ষেপ করে তাকে আচ্ছন্ন করে তাকে সুন্দর করবার জন্যে। ঘরের মধ্যে আনবার জন্যে, লােকালয়ের উপরে বিস্তৃত করবার জন্যে, ভালােবাসার লােকের মুখের উপরে ধরে তাকে নূতন এবং সুন্দর আলােকে দেখবার জন্যে।

 সন্ধ্যা হয়ে এল। ঢং ঢং ঢং ঢং ঘণ্টা বেজে গেল। সকলে বেশভূষা পরিবর্তন করে সান্ধ্যভােজনের জন্যে সুসজ্জিত হতে গেল। আধ ঘণ্টা পরে আবার ঘণ্টা বাজল। নরনারীগণ দলে দলে ভোজনশালায় প্রবেশ করলে। আমরা তিন বাঙালী একটি স্বতন্ত্র ছােটো টেবিল অধিকার করে বসলুম। আমাদের সামনে আর-একটি টেবিলে দুটি মেয়ে একটি উপাসক-সম্প্রদায়ের দ্বারা বেষ্টিত হয়ে খেতে বসেছেন।

 চেয়ে দেখলুম তাঁদের মধ্যে একটি যুবতী আপনার যৌবনশ্রী বহুল পরিমাণে উদ্‌ঘাটিত করে দিয়ে সহাস্যমুখে আহার এবং আলাপে নিযুক্ত আছেন। তাঁর শুভ্র সুগােল সুচিক্কণ গ্রীবাবক্ষবাহুর উপর সমস্ত বিদ্যুৎ-প্রদীপের অনিমেষ আলাে এবং পুরুষমণ্ডলীর বিস্মিত সকৌতুক দৃষ্টি বর্ষিত হচ্ছিল। একটা অনাবৃত আলােকশিখা দেখে দৃষ্টিগুলাে যেন কালাে কালাে পতঙ্গের মতাে চারি দিক থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে লম্ফ দিয়ে পড়ছে। এমনকি অনেকে মুখ ফিরিয়ে ফিরিয়ে তাকে নিরীক্ষণ করছে এবং তাই নিয়ে ঘরে সর্বত্র একটা হাস্যকৌতুকের তরঙ্গ উঠেছে। অনেকেই সেই যুবতীর পরিচ্ছদটিকে ‘ইন্‌ডেকোরাস’ বলে উল্লেখ করছে। কিন্তু আমাদের মতাে বিদেশী লােকের পক্ষে তার বেআব্রু বেআদবিটা বােঝা একটু শক্ত। কারণ, নৃত্যশালায় এ রকম কি এর চেয়ে অনাবৃত বেশে গেলে কারও বিস্ময় উদ্রেক করে না। যেখানে সদ্যপরিচিত স্ত্রীপুরুষে পরস্পর আলিঙ্গনপাশে নিবন্ধ হয়ে উন্মতের মতাে নৃত্য

৮১