পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলেন বললেই চলে, কেবল দুই-এক পাতার সংক্ষিপ্ত “মাসিক সাহিত্য সমালোচনা”র জন্যে লেখনীধারণ করতেন। তাঁর কারবার ছিল পরের ধন নিয়ে। কিন্তু তা পরের ধনে পোদ্দারি হয়ে উঠত না— পরস্বের মধ্যেই পাওয়া যেত তাঁর নিজস্বটুকু। তিনি যে সব রচনা নির্বাচন করতেন, সেগুলির ভিতরই থাকত তাঁর চিন্তাশীলতা ও সূক্ষ্ম রসবোধের পরিচয়।

 “সাহিত্য” লেখকদের জন্যে পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করত না। তবু বিখ্যাত লেখকরা “সাহিত্যে” রচনা প্রকাশ করবার জন্যে আগ্রহ প্রকাশ করতেন। “সাহিত্যে”র লেখক হওয়া তখন যেন একটা গৌরবের বিষয় ব’লে গণ্য হত। “সাহিত্য” ছিল যেন রচনার কষ্টিপাথর। দীনেন্দ্রকুমার রায় ও হরিসাধন মুখোপাধ্যায় প্রভৃতি লেখকরা নিম্নশ্রেণীর বিলাতী মাসিকপত্রের গল্প থেকে স্বীকার না ক’রেই আখ্যানবস্তু গ্রহণ করতেন এবং “ভারতী” ও “প্রদীপ” প্রভৃতি পত্রিকার সম্পাদকরা অনায়াসেই সে সব লেখা ছাপিয়ে দিতেন। কিন্তু “সাহিত্যে” এ সব অনাচার হবার যো ছিল না। সুরেশচন্দ্র যখন দীনেন্দ্রকুমারের লেখা নিয়েছেন, তখন গ্রহণ করেছেন তাঁর মৌলিক রচনা পল্লীচিত্রই। অথচ অনুবাদে তাঁর অরুচি ছিল না। তিনি জানতেন, অনুবাদে সাহিত্যের পুষ্টি হয়। “সাহিত্যে”ও ইংরেজী থেকে অনূদিত রচনা প্রকাশিত হ’ত। কিন্তু সে সব শ্রেষ্ঠ রচনার অনুবাদ।

 সুরেশচন্দ্রের ভাষা ছিল যেমন মিষ্ট, তেমনি শিষ্ট। যেমন তার স্বকীয় ভঙ্গি, তেমনি তার সাবলীল গতি। স্বচ্ছ, ঝরঝরে, প্রাঞ্জল। ছোট ছোট কথা দিয়ে জাহির করতেন বড় বড় ভাব। এই চমৎকার ভাষায় প্রথম জীবনে তিনি রচনা করেছিলেন গুটিকয় চমৎকার গল্প, পরে “সাজি” নামে সেগুলি পুস্তকাকারে

১০৪