পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

প্রসাদদাস গোস্বামী, অক্ষয়কুমার বড়াল, ললিত মিত্র, বিজয়চন্দ্র মজুমদার, কবি দেবকুমার রায় চৌধুরী ও আমেরিকা থেকে সদ্যপ্রত্যাগত একজন ডাক্তার (হোমিওপ্যাথ)।

 দেবকুমার রায় চৌধুরী দ্বিজেন্দ্রলালকে সম্বোধন ক’রে বললেন, ‘আপনি কাল রবিবাবুর যে কবিতাটির কথা বলেছিলেন, আমি আজ তা প’ড়ে দেখেছি। ঠিক বলেছেন, কবিতাটি শ্লীল নয়।’

 আমি বললুম, ‘ও কবিতাটি পড়ে আমার মনে কিন্তু অশ্লীল ভাব জাগে না। তবে ওটি হাল্কা যৌবনের তরল ভাবের কবিতা বটে। আর সেই জন্যেই মোহিতলাল সেন সম্পাদিত রবীন্দ্রগ্রন্থাবলীর ‘যৌবন-স্বপ্ন’ বিভাগে কবিতাটিকে স্থান দেওয়া হয়েছে।’

 সুরেশচন্দ্র মুখ টিপে হাসতে হাসতে ডাক্তারকে ডেকে বললেন, ‘ওহে, তোমাদের হোমিওপ্যাথিতে যৌবন-স্বপ্ন দোষের কি ওষুধ আছে না?’

 ঔষধের নাম বললেন ডাক্তার। অনেকেই হেসে উঠলেন, কিন্তু দ্বিজেন্দ্রলালের মুখ গম্ভীর। আমি লজ্জায় মাথা নত করলুম। আমার মত কনিষ্ঠের কাছেও সুরেশচন্দ্র নিজের বয়সের মর্যাদা রক্ষা করতে পারলেন না! রবীন্দ্রনাথের কাব্যে তথাকথিত অশ্লীলতা আবিষ্কার করবার জন্যে যাদের এত মাথাব্যথা, তাঁদের মুখ থেকে লোকে অন্তত শ্লীল ভাষাই প্রার্থনা করে। প্রসঙ্গক্রমে ব’লে রাখি দ্বিজেন্দ্রলালকে আমি কোনদিন আপত্তিকর ভাষা ব্যবহার করতে শুনি নি।

 সুরেশচন্দ্র দীর্ঘজীবী হন নি—অর্ধশতাব্দীকালের মধ্যেই ফুরিয়ে যায় তাঁর পৃথিবীর মেয়াদ। তিনি আরো বড় হ’তে পারতেন, কিন্তু আলস্য তাঁকে আরো বড় হ’তে দেয় নি।

১০৮