পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চৌদ্দ

 সাধু ভাষার সাধুতা রক্ষা করবার জন্যে চলতি ভাষাকে চলতে দেন নি গৌড়ীয় সাধু ব্যক্তিগণ। তাঁরা মাতৃভাষাকে আবদ্ধ ক’রে রেখেছিলেন সংস্কৃতের সুদৃঢ় নিগড়ে। সেই নিগড় প্রথমে ভাঙেন প্যারীচাঁদ মিত্র, তারপর কালীপ্রসন্ন সিংহ। কিন্তু একটি কি দুটি কোকিলের ডাকে যেমন বসন্ত আসে না, তেমনি তাঁদের সেই প্রাথমিক প্রচেষ্টার ফলে বাঙালী সাহিত্যিকদেরও নিদ্রাভঙ্গ হয় নি। “আলালের ঘরের দুলাল” ও “হুতোম প্যাঁচার নক্সা”র ভাষা উচ্চসাহিত্যের দরবারে আভিজাত্য অর্জন করতে পারে নি বহুকাল পর্যন্ত। নাটক ও উপন্যাসের সংলাপে লেখকরা কথ্য ভাষা ব্যবহার করতেন কতকটা যেন দায়ে প’ড়েই। কোন কোন ঔপন্যাসিক তাও করতেন না। এমনকি বছর দুই আগেও দেখলুম আমাদের একজন সুবিখ্যাত লেখক উপন্যাসের সংলাপেও কথ্য ভাষাকে সাবধানে ‘বয়কট’ করেছেন। এ যেন জোর ক’রে নদীর মোড় ফেরাবার দুশ্চেষ্টা।

 কথ্য ভাষাকে যাঁরা সম্যকরূপে জাতে তুলতে পেরেছেন, তাঁদের প্রধান অধিনায়ক হচ্ছেন দুইজন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও প্রমথ চৌধুরী। পরে তাঁদের প্রভাবে প’ড়ে “ভারতী” গোষ্ঠীভুক্ত অধিকাংশ লেখকই উপন্যাস, গল্প ও প্রবন্ধ রচনার সময়ে অবলম্বন করেন একমাত্র কথ্য ভাষাই। কিন্তু শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মত প্রতিভাবান লেখকও কথ্য ভাষার পক্ষপাতী ছিলেন না। যদিও দুই একবার কথ্য ভাষা ব্যবহার করেছেন, কিন্তু বিশেষ সুবিধা ক’রে উঠতে

১০৯