পাতা:যাঁদের দেখেছি - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যাঁদের দেখেছি

পারেন নি। কোন কোন লেখকের ধাতে কথ্য ভাষা সয় না।

 ‘বীরবল’ ছদ্মনামে প্রমথ চৌধুরী যখন প্রথম প্রথম একান্তভাবে চলতি ভাষাই ব্যবহার করতেন, রবীন্দ্রনাথও তখন তাঁর পাশে ছিলেন না। সুতরাং চলতি ভাষাকে জাতে তোলবার প্রধান গৌরব তাঁরই প্রাপ্য। “বীরবলী” ভাষা বহুবার আক্রান্ত ও উপহসিত হয়েছে। কিন্তু তিনি একটুও টলেন নি, ভ্রুক্ষেপও করেন নি। “বীরবলী” পদ্ধতিতে রচনার পর রচনা ক’রে গিয়েছেন এবং প্রতিপক্ষের ভ্রান্তি অপনয়নের জন্যে চলতি ভাষার পক্ষ নিয়ে যথেষ্ট ওকালতি করতেও ছাড়েন নি। তিনি না থাকলে চলতি ভাষা হয়তো আজও সচল হ’তে পারত না। এ আন্দোলনের স্রষ্টা হচ্ছেন তিনিই। চলতি ভাষার মধ্যে আছে কতখানি সচলতা, সজীবতা ও বলিষ্ঠতা, সর্বপ্রথমে তা আবিষ্কার করেছিল তাঁরই দিব্যদৃষ্টি। পরে তাঁর যুক্তির সারবত্তা উপলব্ধি ক’রে রবীন্দ্রনাথও তাঁর পক্ষে যোগ দেন। প্রথমে তিনি সাধু ভাষাতেই প্রমথ চৌধুরীকে সমর্থন ক’রে “সবুজপত্রে” একটি প্রবন্ধ লেখেন। তারপর “পাত্র ও পাত্রী” গল্পে সর্বপ্রথমে ব্যবহার করেন চলতি ক্রিয়াপদ (১৩২৪ সাল)। রবীন্দ্রনাথকেও তিনি দলে টানতে পেরেছিলেন, প্রমথ চৌধুরীর পক্ষে এও একটা বিশেষ গর্বের বিষয় এবং রবীন্দ্রনাথ তাঁর পক্ষ গ্রহণ না করলে তিনিও চলতি ভাষার মামলা এত সহজে জিততে পারতেন না।

 প্রায় বাল্যকাল থেকেই বীরবলের বিবিধ প্রবন্ধ প’ড়ে আনন্দলাভ ক’রে এসেছি, যদিও তখন তিনি লিখতেন অল্পই। কিন্তু অবশেষে তাঁকে রীতিমত কোমর বেঁধে সাহিত্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হ’তে হ’ল। আমার স্বর্গীয় বন্ধু ও বিখ্যাত লেখক মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায় নূতন এক পত্রিকা প্রকাশের সংঙ্কল্প ক’রে রবীন্দ্রনাথের রচনা প্রার্থনা

১১০